বিসিবির আচরণ আমার কাছে গভীর উদ্বেগ তৈরি করেছে: হাথুরু

অনলাইন ডেস্ক: বাংলাদেশের হেড কোচের দায়িত্ব থেকে চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তার সঙ্গে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিভ) চুক্তি বাতিল করার পর তিনি বাংলাদেশ থেকে বিদায় নিয়েছেন। যেখানে বিসিবির পক্ষ থেকে দুটি অভিযোগ হাথুরুসিংহের বিরুদ্ধে- ‘মিসকন্ডাক্ট উইথ আ প্লেয়ার’ ও ‘মিসকন্ডাক্ট অ্যাজ আ এমপ্লয়ি।’ কিন্তু সেই অভিযোগগুলোকে তিনি উড়িয়ে দিয়েছেন।

দেশ ছাড়ার আগে এক বিবৃতিতে হাথুরুসিংহে তুলে ধরেছেন তার যুক্তি। এই ঘটনা নিয়ে তার সঙ্গে কেউ আলোচনা করেনি বলেও দাবি বিদায়ী কোচের। যুক্তি দিয়ে তিনি নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন, কিছু ব্যাপারে আক্ষেপ আর বিস্ময়ের কথা জানিয়েছেন। পাশাপাশি বিদায়ী কোচ তুলেছেন কয়েকটি প্রশ্ন আর পাল্টা অভিযোগও।

ভারতে অনুষ্ঠিত গত বছর ওয়ানডে বিশ্বকাপ চলার সময় নাসুম আহমেদের গায়ে তিনি হাত তুলেছিলেন, এমন খবর ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার কিছুদিন পর। দেশের ক্রিকেটে আলোচনার ঝড় ওঠে সেটিকে ঘিরে। বিশ্বকাপ ব্যর্থতার তদন্তে গঠিত কমিটির প্রতিবেদনে ঘটনার উল্লেখ আছে বলে এবার জানান বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ। তিনি নিজেও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত হয়েছেন বলে দাবি করেন।

বিবৃতিতে হাথুরু লিখেছেন, আমি এই চিঠি লিখছি ২০২৩ বিশ্বকাপের সময় এক খেলোয়াড়ের ওপর কথিত আক্রমণ, অনুমতি ছাড়া অতিরিক্ত ছুটি নেওয়ার দাবি, আমার সততা এবং পেশাদারিত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করে বিসিবির তোলা সাম্প্রতিক অভিযোগের সমাধান করার জন্য। আমি প্রতিক্রিয়া না জানিয়ে এসব অভিযোগের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে পারি না। আমার মনে হয় এসব বিষয় খোলাসা করা দরকার। আমি সেটিই উপস্থাপনের চেষ্টা করছি।

প্রথমত, কথিত ঘটনাটি খেলোয়াড়দের ডাগআউট বা ড্রেসিংরুমে ঘটেছিল বিশ্বকাপ চলাকালীন। বিশ্বকাপের ম্যাচ চলার সময় ৪০ থেকে ৫০টিরও বেশি ক্যামেরা থাকে। আমি এটি জিজ্ঞাসা করতে কোনো অভিযোগকারী বা সাক্ষীকে পাইনি। ঘটানাটি দাবি করার মতো গুরুতর হলেও খেলোয়াড়টি টিম ম্যানেজার বা কোনো কর্তৃপক্ষকে জানায়নি। অভিযোগ যদি করা হয়, তাহলে ওই সময় আমাকে কেন প্রশ্ন করা হয়নি? যখন কোনো ব্যক্তি ইউটিউবে কথিত ঘটনার বর্ণনা করেছেন, এরপর কেন প্রশ্নটি উঠছে?

ছুটি নেওয়ার বিষয়ে বলছি। যখনই আমার প্রয়োজন হয়েছে আমি (বিসিবি) প্রধান নির্বাহী এবং ক্রিকেট অপারেশনস কমিটির চেয়ারম্যান- দুজনের কাছ থেকেই অনুমোদন চেয়েছি এবং ছুটি পেয়েছি। বিসিবি কখনও আমাকে জানায়নি যে, আমার ছুটি নিয়ে তারা খুশি নন। অথচ আমি যতবারই ছুটি চেয়েছিলাম, সেটি বিসিবি মঞ্জুর করেছে। আমি কখনও বিসিবির অনুমতি ছাড়া ছুটিতে যাইনি।

যখন বোর্ডের নতুন সদস্যরা অভিযোগ করছেন যে, আমি অতিরিক্ত ছুটি নিয়েছি, তখন তারা সরকারি ছুটির হিসাব করেননি। যেমন ঈদের দিন বা শুক্রবার। আমি যখন শুক্রবার ছুটি নেইনি, তখন সেটির কৃতিত্ব তারা আমাকে দেয়নি। আমি বুঝতে পেরেছি, বাংলাদেশের শ্রম আইন অনুযায়ী আমি শুক্রবার পুরোদিন এবং বৃহস্পতিবার অর্ধেক দিনের ছুটির প্রাপ্য। এটাও বলা দরকার যে, বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) সময় বিদেশি কোচদের ছুটি নেওয়াটা সাধারণ ঘটনা এবং এটিই হয়ে আসছে। এ ধরনের ছুটি সাধারণ ছুটির মতো বিবেচিত হবে না।

এসব অভিযোগ এখন আমার কাছে পূর্বপরিকল্পিত মনে হচ্ছে। নতুন সভাপতি (ফারুক আহমেদ) মেয়াদের প্রথম দিনই আমাকে বরখাস্ত করার ইচ্ছা প্রকাশ করে সংবাদমাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছেন। এতে করে বিসিবির আর্থিক ক্ষতি হতে পারে। অথচ নতুন কোচ (ফিল সিমন্স) নিয়োগের কেবল চার ঘণ্টা আগে আমাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আমি বিস্মিত হয়েছি। নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে নোটিশে আমাকে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এসব কর্মকাণ্ডের ধারাবাহিকতায় গুরুতর প্রশ্ন উঠছে এবং নেপথ্যে কোনো উদ্দেশ্য ইঙ্গিত করছে।

পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে নিরাপত্তার কারণে আমাকে বাংলাদেশ ছাড়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এসব অভিযোগের সংমিশ্রণ, দ্রুত নতুন প্রধান কোচের নিয়োগ, যথাযথ প্রক্রিয়ার অভাব, নতুন ব্যবস্থাপনার অনুপ্রেরণা এবং বিসিবির অভ্যন্তরে কর্মকর্তাদের আচরণ আমার কাছে গভীর উদ্বেগ তৈরি করেছে। আমি আমার সম্মান রক্ষার্থে অঙ্গীকারবদ্ধ এবং এসব অভিযোগের বিষয়ে তদন্তে আমি সম্পূর্ণ সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আছি। শেষ পর্যন্ত সত্যের জয় হবে। আমি খেলাটিকে ভালোবাসি এবং ইতিবাচক অবদান রাখতে চাই।

Related Articles

Back to top button