ডিম কিনতে হিমশিম, ডজনে গুনতে হচ্ছে ১৭০-১৭৫ টাকা

অনলাইন ডেস্ক: লাগামহীন হয়ে পড়েছে ডিমের বাজার। রাজধানীর খুচরা বাজারগুলোতে প্রতি ডজন ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৭৫ টাকা পর্যন্ত। ডিমের দামে লাগাম টানতে উৎপাদক, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে যৌক্তিক মূল্য বেঁধে দিয়েছে সরকার। এমনকি বাজারে সরবরাহ বাড়াতে ভারত থেকে ডিম আমদানি করা হচ্ছে।

তার পরও নিয়ন্ত্রণে আসছে না ডিমের বাজার।

বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূলত বাজারগুলোতে জোরালো তদারকি বা অভিযান না থাকার সুযোগ নিয়ে ডিমের বাজার অস্থির করছে কিছু অসাধু সিন্ডিকেট। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ছাড়া তদারকির সঙ্গে যুক্ত থাকা সরকারি অন্যান্য সংস্থা মাঠে অকার্যকর। সংস্থাগুলো কাজের গতি না বাড়ালে বাজার পরিস্থিতি ক্রেতার অনুকূলে আসার সুযোগ কম।

ফলে সরকার নির্ধারিত মূল্য উপেক্ষা করে দফায় দফায় ডিমের দাম বেড়েই চলেছে। যদিও তদারকি সংস্থাগুলো বলছে, তাদের অভিযান কার্যক্রম অব্যাহত আছে।

ভোক্তারা বলছেন, ডিমের বাজারে এখনো শক্ত একটা সিন্ডিকেট কাজ করছে। সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।

সরকার দাম নির্ধারণের দুই সপ্তাহের বেশি সময় চলে গেলেও তা কার্যকর হয়নি।
গতকাল রবিবার রাজধানীর রামপুরা কাঁচাবাজার, বাড্ডা ও জোয়ারসাহারা বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খুচরায় প্রতি হালি ফার্মের মুরগির ডিম ৬০ টাকায় এবং প্রতি ডজন ১৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে পাড়া-মহল্লায় প্রতি ডজন ডিম ১৮০ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে। বাজারে শুধু ডিম নয়, কাঁচা মরিচসহ প্রায় সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে। চলতি সপ্তাহে সবজির দাম কেজিতে ২০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

দেশের প্রান্তিক খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে ডিমের চাহিদা আছে দৈনিক চার কোটি পিস। উৎপাদন হচ্ছে প্রায় তিন কোটি ৭০ থেকে ৭৫ লাখ পিস। বন্যায় অনেক খামার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াসহ অতিবৃষ্টি ও গরমের কারণে দৈনিক ২৫ থেকে ৩০ লাখ পিস ডিমের উৎপাদন কম হচ্ছে। উৎপাদন কমলেও বাজারে ডিমের চাহিদা কমেনি; যার কারণে ঘাটতি থাকছে।

বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন অভিযোগ করেছে, ডিম ও মুরগির বাজারে অস্থিরতার কারণ করপোরেট গ্রুপ ও তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ীদের আধিপত্য বিস্তার। এই সিন্ডিকেট বারবার বাজারে সিন্ডিকেট করে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করে নিলেও তাদের শাস্তি না হওয়ার কারণে বাজারে অস্থিরতা বাড়ছেই। সংগঠনটির দাবি, গত ২০ দিনেই ডিম ও মুরগির বাচ্চার দাম বাড়িয়ে প্রায় ২৮০ কোটি টাকা লুট করেছেন করপোরেট ব্যবসায়ীরা।

রাজধানীর বাড্ডা বাজারের ডিম বিক্রেতা মো. হিমেল গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পাইকারিতে এখন কয়েক দিন পর পর ডিমের দাম বাড়ছে। দাম বাড়ার কারণে এখন প্রতি ডজন ডিম ১৭৫ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে, যা এক দিন আগেও ১৭০ টাকায় বিক্রি করা গেছে।’

ভোক্তা স্বার্থ সংরক্ষণে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ভলান্টারি কনজিউমারস ট্রেনিং অ্যান্ড অ্যাওয়ারনেস সোসাইটির (ভোক্তা) নির্বাহী পরিচালক মো. খলিলুর রহমান সজল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সুযোগ পেলেই অতিমুনাফার জন্য ব্যবসায়ীরা নানা অজুহাত দিয়ে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন। বন্যায় সরবরাহের ঘাটতির কথা বলে ডিম, মুরগি, সবজিসহ কয়েকটি পণ্যের দাম বাড়ানো হলেও বাজারে সরবরাহের কোনো ঘাটতি নেই।

বাজার নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সরকারকে স্বল্পমেয়াদি কিছু ব্যবস্থা নিতে হয়, কিন্তু আমরা অন্তর্বর্তী সরকারকে এ ধরনের ব্যবস্থা নিতে দেখছি না। তাই ভোক্তাদের স্বস্তি দিতে দ্রুত স্বল্পমেয়াদি ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি বাজার তদারকিতে জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।’

ভারত থেকে আরো এলো ২,৩১,৮৪০ পিস ডিম

ভারত থেকে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে আরো দুই লাখ ৩১ হাজার ৮৪০ পিস মুরগির ডিম আমদানি করা হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রতিটি ডিমে খরচ পড়েছে প্রায় সাত টাকা। গতকাল দুপুরে ভারতীয় একটি ট্রাকে এই ডিম আমদানি হয়। বেনাপোল কাস্টমস চেকপোস্টের কার্গো শাখার রাজস্ব কর্মকর্তা শেখ জাহিদুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

দ্বিতীয়বারের মতো বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত থেকে ডিমের চালান আমদানি হলো। এর আগে গত ৯ সেপ্টেম্বর দুই লাখ ৩১ হাজার পিস ডিম আমদানি করে হাইড্রো ল্যান্ড সল্যুশন নামে ঢাকার একটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান

রাজধানীতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তদারকি

নিত্যপণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখা ও বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দুটি টিম গতকাল রাজধানীর নিউ মার্কেট কাঁচাবাজার ও গুলশান কাঁচাবাজার তদারকি করেছে। এ সময় তদারকি টিম বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে সাতটি প্রতিষ্ঠানকে ২৯ হাজার টাকা জরিমানা করেছে। এর মধ্যে গুলশান কাঁচাবাজারে ছয়টি প্রতিষ্ঠানকে ২৭ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

ঢাকা নিউ মার্কেট কাঁচাবাজারে তদারকি টিমের নেতৃত্ব দেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব মো. মেহেদী হাসান। আর গুলশান কাঁচাবাজারে অভিযানে নেতৃত্বে দেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মানসুরীন খান চৌধুরী।

Related Articles

Back to top button