বন্যায় শেরপুর ও ময়মনসিংহের ১৬৩ গ্রাম প্লাবিত, ২ জনের মৃত্যু
অনলাইন ডেস্ক: পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিতে শেরপুর ও ময়মনসিংহের বেশ কিছু এলাকায় আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে শেরপুরের নালিতাবাড়ী, শ্রীবরদী ও ঝিনাইগাতী উপজেলায় কমপক্ষে ১১৩টি গ্রাম এবং ময়মনসিংহের ধোবাউড়ায় ৫০টি গ্রাম পানিতে প্লাবিত হয়েছে।
এদিকে বন্যার পানিতে শেরপুরের নালিতাবাড়িতে ২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া উপজেলার অভয়নগর ও নামাবাতকুচি এলাকা থেকে তিন ব্যক্তি নিখোঁজ হয়েছেন। তবে তাদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। নিহতরা হলেন- উপজেলার বাঘবেড় ইউনিয়নের বালুচর এলাকার মানিক মিয়ার স্ত্রী রহিজা বেগম (৪০) এবং নয়াবিল ইউনিয়নের খালিসাকুড়া গ্রামের কৃষক ইদ্রিস আলী (৭৫)।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে ভোগাই ও চেল্লাখালী নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে নদী দুটির বাঁধ ভেঙে পানি উপচে পড়ছে। পানির তোড়ে প্লাবিত হয়েছে পোড়াগাঁও, নয়াবিল, রামচন্দ্রকুড়া, বাঘবেড় ইউনিয়নসহ পৌরসভার গড়কান্দা ও নিচপাড়া এলাকা। চেল্লাখালী নদীর পানিতে তলিয়ে গেছে নন্নী-আমবাগান সড়ক, নন্নী-মধুটিলা ইকোপার্ক সড়ক, আমবাগান-বাতকুচি সড়ক।
ঝিনাইগাতীতে উপজেলা পরিষদ চত্বর, সদর বাজারসহ ৪০ গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। গতকাল শুক্রবার মহারশি ও সোমেশ্বরী নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে।
শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার সীমান্তঘেঁষা রানীশিমুল ও সিঙ্গাবরুণা ইউনিয়নের ১৩ গ্রামের প্রায় দুই হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ঢলের পানিতে অনেক সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় যাতায়াত বন্ধ হয়ে গেছে। আমনের খেত নিমজ্জিত হয়েছে।
টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ময়মনসিংহের ধোবাউড়ার নেতাই নদের বাঁধ ভেঙে উপজেলার অন্তত ৫০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এলাকাগুলো বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় মুঠোফোনের নেটওয়ার্কও নেই।
ধোবাউড়া উপজেলার দক্ষিণ মাইজপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবীর গণমাধ্যমকে বলেন, দিনভর টানা বৃষ্টি চলছে। কালিকাবাড়ি, পঞ্চনন্দপুর, সেহাগীপাড়া, মন্দিরঘোনাসহ বেশ কয়েকটি জায়গায় বাঁধ ভেঙে গেছে।
কয়েক দিনের টানা বর্ষণ ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ঝিনাইগাতীর মহারশি ও নালিতাবাড়ীর ভোগাই ও চেল্লাখালী নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কয়েক স্থানে ভেঙে গেছে নদীর বাঁধ। এতে জেলার শতাধিক গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে শতশত পরিবার।
পাহাড়ি ঢলের পানি প্রবেশ করেছে ঝিনাইগাতী উপজেলা শহরে। এতে ডুবে গেছে প্রধান সড়ক, বাজারের অলিগলি ও অফিসসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আকস্মিক ঢলের পানিতে প্লাবিত হওয়ায় বিপাকে পড়েন স্থানীয় বাসিন্দারা। রাতভর বৃষ্টিতে প্লাবিত হয় নিম্নাঞ্চলের প্রায় অর্ধ শতাধিক গ্রাম। এখনো বৃষ্টি চলমান থাকায় নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, শেরপুরের নালিতাবাড়ীর ভোগাই নদীর দুই পাড়ের কয়েকটি স্থানে দেখা দিয়েছে ভাঙন। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। অপরদিকে, শ্রীবরদীর সীমান্তবর্তী ভারত থেকে নেমে আসা সোমেশ্বরী নদীর পানিও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সেই সঙ্গে পানিতে ডুবে গেছে শতশত পুকুর, সবজি ক্ষেত ও ধানের ক্ষেত। বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকলে চরম বিপর্যয় নেমে আসার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। তবে এখনও প্রশাসন বা জনপ্রতিনিধিদের কোনো সহায়তা তারা পায়নি বলে জানান বন্যা দুর্গত এলাকার পানিবন্দি বাসিন্দারা।
ভারী বর্ষণ ও উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে তিস্তা নদীর তীরবর্তী হাজার হাজার পরিবার পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকট।
আজ রবিবার সকাল ৬টায় লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার দোয়ানীতে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ১৭ মিটার। যা বিপৎসীমার (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ মিটার) ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এর আগে গতকাল শনিবার দুপুর থেকে পানি প্রবাহ বিপৎসীমার কাছাকাছি প্রবাহিত হয়। ফলে নদী তীরবর্তী অঞ্চল বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। এতে তিস্তা তীরবর্তী কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্র ও চরবাসী জানান, ভারতে সিকিমের উৎপত্তিস্থল থেকে ভারতে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে তিস্তা নদী। নদীর বাংলাদেশ অংশের উজানে বাঁধ নির্মাণ করে তিস্তা পানি নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছে প্রতিবেশী দেশ ভারত। বর্ষাকালে অতিরিক্ত পানি গজলডোবা গেট খুলে বাংলাদেশ অংশে ছেড়ে দেয়া হয়। একইভাবে শুষ্ক মৌসুমে গেট বন্ধ করে বাংলাদেশকে মরুভূমি করে তিস্তার পানি এককভাবে ব্যবহার করছে ভারত সরকার।
বর্ষাকাল শুরু হওয়ায় উজানে ভারতে প্রচুর বৃষ্টিপাত হচ্ছে। ফলে অতিরিক্ত পানি বাংলাদেশ অংশে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। এই উজানের ঢলে তিস্তার পানি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। একইসঙ্গে যুক্ত হয়েছে কয়েক দিনের টানা ভারি বৃষ্টিপাত। ফলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদ সীমা ছুঁই ছুঁই করছে।
প্রতিদিনের বৃষ্টিপাত আর উজানের ঢলে পানি বৃদ্ধির ফলে তিস্তাসহ সব নদ-নদীর পানির পাশাপাশি বিলের পানি বৃদ্ধিও অব্যাহত আছে। এতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় বসতবাড়ি ও রাস্তাঘাট ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে। সেই সঙ্গে ফসলি জমিতে পানি ওঠায় নষ্ট হচ্ছে আগাম শীতকালীন শাকসবজি ও বীজতলাসহ বিভিন্ন ফসল।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিস্তা পানি বৃদ্ধিতে জেলার পাটগ্রামের দহগ্রাম, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, দোয়ানী, সানিয়াজান ইউনিয়নের নিজ শেখ সুন্দর, সিঙ্গামারি ইউনিয়নের ধুবনী, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, ডাউয়াবাড়ী ইউনিয়নের তিস্তা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, শনিবার পর্যন্ত রংপুর বিভাগ ও তৎসংলগ্ন উজানে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের প্রবণতা আছে। এর ফলে তিস্তা নদীর পানি সমতল আগামী দুই দিন পর্যন্ত দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে এবং পরবর্তী এক দিন পর্যন্ত পানি সমতল স্থিতিশীল থাকতে পারে। আগামী দুই দিন পর্যন্ত তিস্তা নদীর পানি সমতল সতর্ক-সীমায় প্রবাহিত হতে পারে। নদী তীরবর্তী চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে।
নদী তীরবর্তী এলাকার বেশ কিছু রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট ভেঙে গেছে পানির তোড়ে। উঠতি আমন ধান ও বিভিন্ন সবজি ক্ষেত ডুবে আছে বন্যার পানিতে। দীর্ঘ সময় ডুবে থাকলে এসব ফসলের মারাত্মক ক্ষতির শঙ্কা করছেন চাষিরা। একই সঙ্গে বন্যার পানির তোড়ে ভেসে গেছে বেশ কিছু পুকুরে মাছ।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচএম রাকিব হায়দার বলেন, নদ-নদীর পানির খবর সার্বক্ষণিক নেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের মাধ্যমে নদী তীরবর্তী এলাকার খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে।
স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীর ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেছেন এসএ পরিবহন তথা এসএ গ্রুপ অব কোম্পানিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সালাহউদ্দিন আহমেদ।
আজ সোমবার সকাল থেকে সোনাইমুড়ীর দেউটি ইউনিয়নের ২ হাজার মানুষের মধ্যে এ খাদ্য সহায়তা দেওয়ার মাধ্যমে শুরু হয় কার্যক্রম। সপ্তাহব্যাপী সোনাইমুড়ীর ১০টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় প্রায় ১২ হাজার পরিবার পাবে এ উপহার।
ত্রাণ সামগ্রী বিতরকালে এসএ গ্রুপ অব কোম্পানিজের ব্যবস্থাপনা পরিচাল সালাহউদ্দিন আহমেদ জানান, ভারতের পানি দ্বারা নোয়াখালীর মানুষ বন্যা কবলিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নোয়াখালীর ২০ লাখ মানুষ। বিবেকের তাড়নায় বসে থাকতে না পেরে বন্যার্তদের মধ্যে ছুটে আসতে হয়েছে। ভূমি দস্যুদের খাল দখলের কারণে পানি নামতে পারছে না। অন্তবর্তীকালীন সরকার এবং সেনা প্রধানকে দেশকে দুর্বৃত্তায়নের হাত থেকে রক্ষা করার আহবান জানান তিনি।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন এসএ গ্রপ অব কোম্পানিজের পরিচালক নুর এ আলম রুবেল, শামসুল আলম প্রান্থ, কো- অডিনেটর হাসান মঞ্জুরসহ অনেকে।
ফ্যাসিস্টদের বিচার এ বাংলার মাটিতেই হবে বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম। আজ শুক্রবার দুপুরে লক্ষীপুরে বন্যা দুর্গত এলাকা পরিদর্শনকালে সদর উপজেলার বাঙ্গাখাঁ উচ্চ বিদ্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিবেশ ধীরে ধীরে ফিরে আসছে। সেনাবাহিনীকেও ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, যেন কার্যক্রমগুলো দ্রুত হয়। ফ্যাসিস্টদের বিচার এ বাংলার মাটিতেই হবে। সে যেই হোক না কেন। ’
তিনি বলেন, ‘সারাদেশে যে মামলাগুলো হয়েছে, এরমধ্যে অনেকগুলোই গ্রহণযোগ্য নয়। সেক্ষেত্রে আমাদের আহ্বান রয়েছে, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই যেন মামলাগুলো করা হয়। সেই মামলার ভিত্তিতেই যেন পুলিশসহ প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করে ও জড়িতদের গ্রেপ্তার করা হয়।’
রাষ্ট্রীয় সংস্কার কার্যক্রম নিয়ে নাহিদ বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমাদের ছয়টি সংস্কার কমিটি হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার কমিটির সঙ্গে বৈঠকও হয়েছে। অক্টোবর মাস থেকেই সংস্কার কমিটির কার্যক্রম শুরু হবে। শিক্ষা ও গণমাধ্যমসহ আরও কিছু সংস্কার কমিশন গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে। কমিশনগুলো সংশ্লিষ্ট ও অভিজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে রূপরেখা তৈরি করবে। তখন সকল রাজনৈতিক ও সামাজিক পক্ষ মিলেই আমরা রুপরেখা অনুযায়ী সংস্কার কার্যক্রম শুরু করব।’
তিনি বলেন, ‘অভ্যুত্থানের বড় দুর্যোগ এসেছে আমাদের দেশে। আমরা দেখেছি, এ দুর্যোগে দেশের জনগণ সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেছে। ছাত্ররাসহ একত্রে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে জনগণ ও প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করেছে। এ ধারা অব্যাহত থাকবে। ’
বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, ‘এখন আমরা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের কার্যক্রমের দিকেই যাচ্ছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজটি এগিয়ে নিতে আমরা কাজ করছি। পানি কমছে, মানুষজনও আশ্রয় কেন্দ্র থেকে চলে যাচ্ছে। লক্ষীপুরে পানি দেরি করে কমছে, কারণ এখানে খালগুলো দখল হয়ে গেছে। সে খালগুলো যদি দখলমুক্ত করা যায়, তাহলে তা দীর্ঘমেয়াদী সুরাহা হবে। এখানে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের গৃহ নির্মাণের জন্য ইতোমধ্যে বরাদ্দ পাঠানো হয়েছে। সে বরাদ্দ অনুযায়ী খুব শিগগিরই গৃহ নির্মাণ করা হবে। জনস্বাস্থ্যের বিষয়টি আমরা সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। দীর্ঘ মেয়াদী পুনর্বাসনের জন্য শিক্ষা-স্বাস্থ্য থেকে শুরু করে এ জনগোষ্ঠীকে সহায়তা করার জন্য সরকার সার্বিকভাবে কাজ করবে।’
এর আগে, বন্যায় দুর্গতদের মধ্যে খাদ্য সহায়তা বিতরণ করেন নাহিদ ইসলাম।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন লক্ষীপুর জেলা প্রশাসক রাজিব কুমার সরকার, জেলা পুলিশ সুপার মো. আকতার হোসেন, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফুর রহমান, সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অভি দাশ ও সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়াছিন ফারুক মজুমদার প্রমুখ।
লক্ষীপুরচট্টগ্রাম বিভাগবন্যাতথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়
কক্সবাজারে আটকা পড়েছেন হাজারো পর্যটক
টানা ভারী বৃষ্টিতে কক্সবাজার শহরের বেশিরভাগ এলাকা পানিতে তলিয়ে হয়েছে। সৈকত এলাকার হোটেল-রিসোর্ট, কটেজ জোনে জলাবদ্ধতা দেখা দেওয়ায় বিপাকে পড়েছেন পর্যটকেরা। পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেলে শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কয়েক হাজার পর্যটক আটকা পড়েছেন। এছাড়া সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে লাল পতাকা উড়িয়ে পর্যটকদের সমুদ্রে নামতে নিষেধ করা হচ্ছে।
বৃষ্টিতে শহরের প্রধান সড়ক, সৈকত সড়কসহ অন্তত ৩৫টি উপসড়ক বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে। এতে কয়েকশো দোকানের মালামাল নষ্ট হয়েছে। হাজারো ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন সেখানকার মানুষেরা। সব মিলিয়ে জনজীবনে নেমেছে স্থবিরতা।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ আব্দুল হান্নান জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টা থেকে শুক্রবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় কক্সবাজারে ৫০১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। চলতি মৌসুমে একদিনে যা সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড। ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকতে পারে। বাতাসের তীব্রতাও বেশি থাকবে, যা দমকা ও ঝোড়ো হাওয়া আকারে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার বেগে বাড়তে পারে।
শহরের ব্যস্ততম পাঁচ কিলোমিটারের প্রধান সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। বাজারঘাটা, বড়বাজার, অ্যান্ডারসন সড়ক, টেকপাড়া, বার্মিজ মার্কেট এলাকা, বৌদ্ধমন্দির সড়ক, গোলদিঘিরপাড়, তারাবনিয়াছড়া, রুমালিয়ারছড়ার কয়েকশো দোকান, অফিস-আদালত ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে বৃষ্টির পানি ঢুকেছে।
এলাকাবাসী বলছেন, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে বৃষ্টিপাত শুরু হলেও ভারী বর্ষণ শুরু হয় দুপুর ২টা থেকে। এরপর শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত টানা ভারী বর্ষণে পুরো শহরের আট লাখ মানুষের কর্মজীবন স্থবির হয়ে পড়ে। গত ৫০ বছরেও এমন ভারী বর্ষণ দেখেননি বলে জানিয়েছেন শহরের প্রবীণ বাসিন্দারা। ভারী বর্ষণের ফলে জেলার বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ১০টি পাহাড়ে ফাটল দেখা দিয়েছে। বেশ কিছু অংশে ভূমিধসের ঘটনাও ঘটছে।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, সহস্রাধিক পর্যটক জলাবদ্ধতায় হোটেল মোটেলে আটকা পড়েছেন। এরকম জলাবদ্ধতা এর আগে দেখিনি। মূলত শহরজুড়ে অপরিকল্পিত উন্নয়ন, পৌর কর্তৃপক্ষের অদূরদর্শী সিদ্ধান্ত ও দুর্নীতি এবং পাহাড় কাটা বেড়ে যাওয়ায় এমন ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।
গেস্টহাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম নেওয়াজ বলেন, দীর্ঘ দুই মাস পর ১০ সেপ্টেম্বর থেকে সৈকতে পর্যটক আসতে শুরু করেছে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন থাকায় শুক্রবার অন্তত এক লাখ পর্যটক সমাগমের আশা ছিল। কিন্তু বৈরী পরিবেশে অধিকাংশ পর্যটক বুকিং বাতিল করেছেন।