আন্দোলনের মুখে কমিটি বৈঠক আজ
অনলাইন ডেস্ক: আন্দোলনকারীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার বিষয়ে বিবেচনার জন্য একটি কমিটি গঠন করেছে সরকার। কমিটির প্রধান জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরীর সঙ্গে আজ মঙ্গলবার আলোচনায় বসবেন চাকরি প্রত্যাশীরা।
আন্দোলনকারীর সাত প্রতিনিধির সঙ্গে সোমবার প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের সঙ্গে প্রায় আড়াই ঘণ্টা আলোচনার পর এ সিদ্ধান্ত হয়। এর আগে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে আন্দোলনকারীদের একটি প্রতিনিধি দল যমুনায় প্রবেশ করে। সেখানে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতিনিধি উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদের সঙ্গে বৈঠক করেন আন্দোলনকারীরা।
রাত সাড়ে ৮টার দিকে বৈঠক থেকে বের হয়ে আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধি রাসেল আল মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘দীর্ঘ সময় আমরা আলোচনা করেছি। হুট করে প্রজ্ঞাপন জারি করা সম্ভব নয়। তাই আগামীকাল দাবি বাস্তবায়নের জন্য জনপ্রশাসন সংস্কার উপদেষ্টা আবদুল মুয়ীদ চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠক হবে। সেই বৈঠকে আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন। দাবি বাস্তবায়নের জন্য মঙ্গলবার যে আলোচনা হবে, তার ভিত্তিতে একটি প্রতিবেদন আগামী সাত দিনের মধ্যে প্রকাশ করা হবে।’
গতকাল সোমবার সচিবালয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোখলেস উর রহমান নিজ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ব্রিফিংয়ে বলেন, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ানোর বিষয়ে আন্দোলন ও দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এ কমিটি করা হয়েছে। কমিটির প্রধান করা হয়েছে সাবেক সচিব আবদুল মুয়ীদ চৌধুরীকে, যিনি জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান। কমিটির সদস্য সচিব করা হয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে। কমিটি আগামী সাত দিনের মধ্যে পরামর্শ দেবে। কমিটিকে প্রয়োজনীয় সংখ্যক সদস্য নেওয়ার এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে।
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে একদল চাকরিপ্রত্যাশী। গতকাল দুপুরে শত শত চাকরিপ্রত্যাশী রাজধানীর শাহবাগে সমবেত হন। এক পর্যায়ে তারা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে এসে অবস্থান নেন। দুপুরে তাদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে পুলিশ। আন্দোলনকারীরা প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাক্ষাৎ চান। এ জন্য তারা ৫টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন। তা না হলে তারা কাফনের কাপড় পরে সেখানে অবস্থান করার ঘোষণা দেন।
দুই উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধি আবু সাঈদ সাদ বলেন, ‘আমরা আন্দোলন এখনই শেষ করছি না। তবে এখন আমরা যমুনার সামনে থেকে চলে যাব। শাহবাগের জাদুঘরের সামনে প্রজন্ম চত্বরে আমরা কালকের আলোচনা পর্যন্ত অবস্থান করব।’ এর পর যমুনার সামনে থেকে আন্দোলনকারীরা চলে যান। এতে করে বন্ধ হয়ে যাওয়া হেয়ার রোডের যান চলাচল শুরু হয়।
এর আগে দুপুর ১টার পর আন্দোলনকারীরা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে পৌঁছানোর পর তাদের ওপর রাবার বুলেট, টিয়ার গ্যাসের শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে পুলিশ। এতে ৮-১০ জন আন্দোলনকারী আহত হন। পুলিশের অ্যাকশনের পরও সেখানে আন্দোলনকারীরা জড়ো হয়ে অবস্থান নিতে শুরু করেন এবং ‘দফা এক দাবি এক, পঁয়ত্রিশ পঁয়ত্রিশ’, ‘আমরা সবাই বয়স সেনা, ভয় করি না বুলেট বোমা’, ‘আবু সাঈদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’, আবু সাঈদের বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।
আন্দোলনকারীরা মিছিল নিয়ে জাতীয় জাদুঘরের সামনে থেকে রওনা হলে প্রথমে শাহবাগে পুলিশ সদস্যরা দাঁড়িয়ে এবং পরে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়ে ব্যারিকেড দিয়ে বাধা দিতে চাইলেও সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়। আন্দোলনকারীরা ব্যারিকেড ভেঙে স্লোগান দিতে দিতে যমুনার দিকে ছুটে যান।
এদিন সকাল ১১টা থেকে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে অবস্থান করে আন্দোলন শুরু করেন চাকরিপ্রত্যাশীরা। শাহবাগ এলাকায় ২ হাজারের বেশি চাকরিপ্রত্যাশী উপস্থিত হয়ে বক্তব্য ও নানা ধরনের স্লোগান দেন। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার দাবি ছাড়াও শর্তসাপেক্ষে বয়সসীমা উন্মুক্ত করারও দাবি জানান তারা।
চাকরিপ্রত্যাশীদের এ আন্দোলনে যোগ দেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও পড়াশোনা সম্পন্ন করা বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ। নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা একসময়ের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনও তাদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন।