৩৫ প্রত্যাশীদের অবস্থান: যমুনার সামনে রণক্ষেত্র
অনলাইন প্রতিবেদক: সরকারি চাকরি আবেদনের ৩৫ বছর বয়স নির্ধারণের দাবিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এর বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থান নিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। অবস্থানকালে আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে কয়েকটি টিয়ারগ্যাস ও দুটি সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
আজ সোমবার বেলা দেড়টার দিকে রাজধানীর মিন্টু রোডে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এর বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা
সরেজমিনে দেখা গেছে, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের চারদিকে পর্যাপ্ত পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নিয়ে রয়েছে।
এসময় শিক্ষার্থীরা চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ এর প্রজ্ঞাপন না নিয়ে অবস্থান ছাড়বেন না বলে ঘোষণা দেন।
এদিকে আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ছোড়া টিয়ারগ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড দুজন আন্দোলনরত আহত হয়েছেন বলেও জানা গেছে।
সমাবেশে অংশ নেওয়া এক ৩৫ প্রত্যাশী বলেন, ‘চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা বৃদ্ধির দাবি নতুন নয়। আমরা এখানে ৩৫ এর দাবি নিয়ে এসেছি। শাহবাগ থেকে এখানে আসার পথে পুলিশ বিভিন্ন স্থানে আমাদের বাধা দিয়েছে।’
সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার দাবি মেনে নিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) এর চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন।
আজ সোমবার সকালে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ করার দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে শুরু হওয়া মহাসমাবেশে সংহতি জানিয়ে তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের প্রতি এ আহ্বান জানান।
সমাবেশে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘আমাদের সবার আশা আকাঙ্ক্ষা ছিল এ রাষ্ট্রের মধ্যে আর কোনো বৈষম্য থাকবে না। কিন্তু এখনো চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩০ থেকে ৩৫ এর জন্য আমার সন্তানরা কষ্ট পাবে, বৃষ্টি উপেক্ষা করে দাবি আদায়ের জন্য দাঁড়াতে হবে এটা আমি কখনো আশা করিনি।’
তিনি বলেন, ‘আমার সন্তানরা কষ্ট করে লেখাপড়া করার পর আবার কষ্ট নিয়ে পৃথিবীতে বেঁচে থাকবে? তার (শিক্ষার্থী) যদি যোগ্যতা থাকে, তার যদি চাকরির বয়স এক বছরও বাকি থাকে, তাহলেও শেষ পরীক্ষার মধ্যে সে অংশগ্রহণ করবে। কারণ আমি মনে করি, একটি ছাত্র তার যোগ্যতা দিয়ে চাকরি অর্জন করবে। তারা কারো কাছে কোনো চাকরি চায় না, দয়া চায় না, সাহায্য-সহানুভূতি চায় না। তারা চায় তাদের অধিকার। যে অধিকার কোটা বৈষম্যের অধিকারের মধ্য দিয়ে নতুন স্বাধীনতা এসেছে, সেখানে কেন এখনো কেন এ বৈষম্য রয়েছে? তাদের এ যৌক্তিক দাবি এখনো কেন পূরণ হচ্ছে না।’
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে দেশকে এ জায়গায় নিয়ে এসেছেন। তাহলে আবার কেন এ বৈষম্য (চাকরিতে আবেদনের বয়স ৩৫ করা) থাকবে? এ বৈষম্য থাকতে পারে না। এটি অত্যন্ত একটি যৌক্তিক দাবি। আপনারাও ছাত্র ছিলেন, ছাত্র থেকে আন্দোলন করেছেন। আজকে এ ছাত্রদের প্রতি আপনাদের কেন সহমর্মিতা নেই? কেন দয়া নেই। আমি এটি আপনাদের কাছে জানতে চাই। কেন আপনারা কালক্ষেপণ করছেন? কেন তাদের দাবিকে মেনে নিচ্ছেন না। আমি আশা করবো, আপনারা এ যৌক্তিক দাবি মেনে নেবেন।’
এর আগে সকাল ১০টায় জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ (শর্ত সাপেক্ষে উন্মুক্ত)’ ব্যানারে এ মহাসমাবেশ শুরু হয়। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে চাকরি প্রত্যাশীদের মহাসমাবেশে যোগ দিতে দেখা যায়। এ সময় তাদের চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায়।
বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) অধীনে অনুষ্ঠিত বিসিএস ক্যাডার ও নন-ক্যাডারের বিভিন্ন পদে নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া গেছে। ফাঁস হওয়া প্রশ্নের সুযোগ নিয়ে চাকরি বাগিয়েছেন প্রথম শ্রেণির অনেক কর্মকর্তাও। এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসছে দেশজুড়ে আলোড়ন তোলা প্রশ্নফাঁসকাণ্ডে গ্রেপ্তার আসামিদের বয়ানে।
৩৩তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা, ৪৬তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত অধিদপ্তরে উপসহকারী প্রকৌশলী নিয়োগ পরীক্ষা, পলিটেকনিক্যাল কলেজের জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের তথ্য উঠে আসে আসামিদের বয়ানে।
সবশেষ রেলওয়ের দশম গ্রেডের উপসহকারী প্রকৌশলী পদে নিয়োগের প্রশ্নপত্র ট্রাংকের তালা কেটে পিএসসির অফিস সহায়ক সাজেদুল ইসলাম সাজু ফাঁস করেছেন বলে আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিতে জানিয়েছেন।
প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে ইতোমধ্যে পিএসসির দুই উপপরিচালক ও সাবেক গাড়িচালকসহ ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ছয়জন আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।
রেলওয়ের প্রকৌশলী নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস করে পিএসসির অফিস সহায়ক সাজেদুল ইসলামের ১ কোটি ২১ লাখ টাকা নেওয়ার হিসাব পাওয়া গেছে। এর মধ্যে পিএসসির সাবেক গাড়িচালক আবেদ আলী দেন ৭৫ লাখ, খলিল ৪৫ লাখ ও ব্যবসায়ী আবু সোলায়মান সোহেল দেন ১ লাখ টাকা। কয়েক মাস আগে এই চক্রের হাতেই ফাঁস হয় পলিটেকনিক্যাল কলেজের জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদের প্রশ্নপত্র।
এ ছাড়া রেলওয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী পদে চাকরি দিতে ৪৪ প্রার্থীর সঙ্গে ৮-১০ লাখ টাকার চুক্তি করেন। তাদের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে পরীক্ষার দুই দিন আগে রমনা পার্কের গেটে সাজেদুলকে ৭৫ লাখ টাকা দিয়ে প্রশ্নপত্র নিয়ে ‘বুথ করে’ প্রার্থীদের পড়ান। সেই প্রশ্নই পরীক্ষায় হুবহু মিলে গেছে।
রেলওয়ের প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়ে সাজেদুল বলেন, তিনি একটি হেক্সব্লেড দিয়ে প্রশ্নপত্র রাখা ট্রাংকের তালা কাটেন। এরপর প্রশ্নপত্র বের করে নষ্ট তালা লাগিয়ে রাখেন। যেটি যেকোনো চাবিতেই খোলে।
সাজেদুল আরও জানান, রেলওয়ের পরীক্ষার জন্য খলিলুর ৯৮ জন প্রার্থীর জন্য দিয়েছিলেন ৪৫ লাখ টাকা। আবেদ আলী দেন ৭৫ লাখ। এ ছাড়া আবু সোলায়মান সোহেল এক লাখ টাকা দেন।
দেশের সব কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ডাক দিয়েছেন সরকারি চাকরিতে কোটা প্রথা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে রাজধানীর শাহবাগ মোড় থেকে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
এর আগে শাহবাগ মোড় টানা ছয় ঘণ্টা অবরোধ করে রাখেন আন্দোলনকারীরা। আজ দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চলে এই অবরোধ। এতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
অবরোধ শেষে মিছিলসহ রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এসে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। কমসূচির মধ্যে রয়েছে আগামীকাল শুক্রবার অনলাইন-অফলাইনে বৈঠক, শনিবার বিকেল ৩টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ মিছিল এবং রবিবার সব কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনসহ অবস্থান ধর্মঘট।
আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘হাইকোর্ট শিক্ষার্থীদের প্রতি প্রহসন করছে। তারা পুনরায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুক এবং শিক্ষার্থীদের দাবি বিবেচনা করুক। আমরা হাইকোর্টের বিরুদ্ধে না। তারা নিজেদের মতো কাজ করে যাবে কিন্তু আমরা আন্দোলনের মাধ্যমে আমাদের দাবি আদায় করে ঘরে ফিরব।’
তিনি আরও বলেন, ‘আজ আমরা ফিরে যাচ্ছি। কিন্তু আগামীতে আরও বেশি শক্তি সঞ্চয় করে রাজপথে নামব। আজ সারাদেশে শিক্ষার্থীরা নিজেদের দাবি আদায়ে আন্দোলন সংগ্রাম করেছে। আশা করি, আমাদের দাবি আদায়ের আগ পর্যন্ত তারা আমাদের সঙ্গে থাকবে।’
চলতি বছরের ঈদুল আজহার (কোরবানির ঈদ) আগে সরকারি চাকরিজীবীদের শেষ কর্মদিবস আজ বৃহস্পতিবার। ছুটি কাটিয়ে আগামী বুধবার ঈদের পর অফিস করবেন তারা।
এবার টানা পাঁচ দিনের ছুটি মিলবে সরকারি চাকরিজীবীদের। এর মধ্যে দুই দিন সাপ্তাহিক ছুটি আর তিন দিন ঈদের ছুটি।
আগামী ১৭ জুন সোমবার দেশে ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে। এ হিসাব করে আগেই সরকারি ছুটির তালিকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সরকারি ছুটির তালিকা অনুযায়ী, কোরবানির ঈদের ছুটি শুরু হবে ঈদের আগের দিন অর্থাৎ ১৬ জুন (রবিবার) থেকে, যা চলবে ১৮ জুন (মঙ্গলবার) পর্যন্ত।
মুসলমানদের জীবনে আল্লাহ প্রদত্ত দুটি আনন্দের দিনের অন্যতম একটি ঈদুল আজহা। ঈদুল ফিতরের দুই মাস ১০ দিন পর মুসলমানরা ঈদুল আজহা পালন করে থাকেন।
হিজরি ক্যালেন্ডারের জিলহজ মাসের ১০ তারিখে ঈদুল আজহা পালন করা হয়। তবে পশু কোরবানি করা যায় ৩ দিন- ১০, ১১ ও ১২ জিলহজ।
সরকারি চাকরিতে অনুমোদিত ১৯ লাখ ১৫১টি পদের মধ্যে ৩ লাখ ৭০ হাজার ৪৪৭টি পদ খালি আছে বলে জানালেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। আজ মঙ্গলবার সচিবালয়ে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) আয়োজিত ‘বিএসআরএফ সংলাপ’ এ অংশ নিয়ে তিনি এ তথ্য জানান।
বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (বিসিএস) ক্যাডারভুক্ত চাকরিতে নারীরা পিছিয়ে যাচ্ছেন, এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে জনপ্রশাসনমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে ৮৪ জন সচিবের মধ্যে ১১ জন নারী। অতিরিক্ত সচিব রয়েছেন ৭৫ জন, যুগ্ম সচিব রয়েছেন ১৬৪ জন, উপসচিব রয়েছেন ৩৯৪ জন, সিনিয়র সহকারী সচিব হিসেবে কর্মরত রয়েছেন ৬৫৮ জন। এ ছাড়াও ৬৪ জেলার মধ্যে জেলা প্রশাসক হিসেবে ৭ জন নারী এবং ইউএনও হিসেবে কর্মরত রয়েছেন ১৫১ জন নারী। এসিল্যান্ড হিসেবে ৮৮ জন কর্মরত হয়েছেন। একজন বিভাগীয় কমিশনার রয়েছেন নারী।
তিনি বলেন, ‘নারীর ক্ষমতায়নে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। আমাদের সব সরকারি চাকরিজীবীদের মধ্যে ২৯ শতাংশ নারী কাজ করছেন।’
সরকারি চাকরিতে পদোন্নতির ক্ষেত্রে নীতিমালা মানা হচ্ছে না- এমন অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘যথাযথ নীতিমালা অনুসরণ করেই পদোন্নতি ও পদায়ন করা হয়। আমাদের এখানে একটা শৃঙ্খলা চলে এসেছে। যখন আমরা পদোন্নতি দেই, একটা প্রশ্ন আসে-পদের চেয়ে পদোন্নতির সংখ্যা বেশি। আপনারা নিশ্চয়ই জানেন, আমাদের অনেক কিছু খেয়াল করতে হয়। আমাদের খেয়াল রাখতে হয়-বেশ কিছু কর্মকর্তা বিদেশে অধ্যয়নরত থাকেন। সরকারের বিভিন্ন স্কলারশিপের অধীনে। বিদেশে বিভিন্ন দূতাবাসে কর্মরতের বিষয়ে তো রয়েছেই। তারপর একটি বিষয় রয়েছে-কিছু সংখ্যক মানুষ থাকে যারা অসুস্থ থাকেন। সেটি বাদেই আমাদের পদোন্নতি করতে হয়।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন পদে যখন পদোন্নতি দিচ্ছি, তখন কিন্তু যে পদ আছে সেই পদের চেয়ে বেশি দিতে হয় যৌক্তিক কারণে। কিছুদিনের মধ্যেই বা ছয় মাসের মধ্যেই বেশ কিছু কর্মকর্তা পিআরএলে চলে যাচ্ছেন। তারপরে বেশ কিছু আমাদের রিজার্ভে রাখতে হয়। কারণ হচ্ছে-যদি কেউ অসুস্থ হয়ে যায়, এই জায়গাটি পূরণ করা।’
সংলাপে সভাপতিত্ব করেন বিএসআরএফের সভাপতি ফসিহ উদ্দীন মাহতাব। সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মাসউদুল হক।