কখন এইচএসসির ফল প্রকাশ, জানা গেল
অনলাইন ডেস্ক: চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল আগামী অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি প্রকাশ করা হবে। এই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড।
ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল কীভাবে তৈরি করা হবে, তার একটি প্রস্তাবনা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সরকারি মাধ্যমিক শাখা থেকে অনুমোদন করে সচিবের দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। পরে তা শিক্ষা উপদেষ্টার কাছে পাঠানো হয়। উপদেষ্টা অনুমোদন দিলে তা চূড়ান্ত করা হবে। আর অনুমোদন না পেলে নতুন করে প্রস্তাব পাঠাতে হবে বোর্ডগুলোকে।
জানতে চাইলে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি এবং ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকারগণমাধ্যমকে বলেন, ‘পরীক্ষার ফলাফল কীভাবে তৈরি করা হবে তার প্রস্তাবনা এখনো অনুমোদন হয়ে আসেনি। মন্ত্রণালয়ে বিষয়টি নিয়ে গুরুত্ব সহকারে কাজ চলছে। শিগগির পেয়ে যাব হয়তো। এ সপ্তাহে না হলে আগামী সপ্তাহে সেটা অনুমোদন হতে পারে।’
প্রস্তাবনা অনুমোদন হয়ে গেলে এইচএসসির ফল প্রকাশের সম্ভাব্য সময় কখন হতে পারে, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আগামী সপ্তাহের মধ্যে প্রস্তাবনা চূড়ান্ত হলে অক্টোবরের মাঝামাঝি ফল প্রকাশ করতে পারব।’
গত ৩০ জুন এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হয়। এতে পরীক্ষার্থী ছিলেন ১৪ লাখ ৫০ হাজার ৭৯০ জন। প্রথম দফায় প্রকাশিত রুটিন অনুযায়ী ৮ দিন পরীক্ষা হওয়ার পর কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে ১৮ জুলাইয়ের সব পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। এরপর তিন দফায় পরীক্ষা স্থগিত করে সরকার।
সবশেষ নতুন তারিখ নির্ধারণ করা হয় গত ১১ আগস্ট। এর মধ্যে পরীক্ষার্থীরা স্থগিত পরীক্ষাগুলো বাতিল করার দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। ২০ আগস্ট সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভবনের নিচে বিক্ষোভ করেন তারা। পরবর্তী সময়ে এসব পরীক্ষা বাতিল করা হয়।
এইচএসসির ফল প্রকাশে জেএসসি ও এসএসসির যত নম্বর যোগ হবে
চলতি বছরের উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশের প্রস্তুতি শুরু করেছে শিক্ষা বোর্ডগুলো। আগামী (অক্টোবর) মাসেই এই ফলাফল প্রকাশ হতে পারে। যেসব বিষয়ের পরীক্ষা হয়েছে, সেগুলোর খাতা মূল্যায়ন করে এবং বাকি বিষয়গুলোতে সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে ফলাফল প্রকাশের প্রস্তাব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিলেই এ প্রক্রিয়ায় ফলাফল প্রকাশ করা হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বোর্ড সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সাবজেক্ট ম্যাপিং হলো একটি বিষয়ে পূর্বতন পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের গড়। করোনাভাইরাস মহামারির সময়েও এই প্রক্রিয়ায় ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে।
সূত্র বলেছে, এবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় যেসব বিষয়ের পরীক্ষা হয়নি, সেগুলোতে নম্বর দেওয়ার ক্ষেত্রে এসব বিষয়ে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) এবং মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের গড় করা হবে। অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জেএসসিতে প্রাপ্ত নম্বরের ২৫ শতাংশ ও এসএসসিতে প্রাপ্ত নম্বরের ৭৫ শতাংশ নম্বর যোগ করে ওই বিষয়ে শিক্ষার্থীকে নম্বর দেওয়া হবে। যেমন গণিতে কেউ জেএসসিতে ১০০ নম্বর পেয়ে থাকলে সেখান থেকে ২৫ এবং এসএসসিতে ১০০ নম্বর পেয়ে থাকলে ৭৫ নম্বর নেওয়া হবে। এ দুটি নম্বর যোগ করলে এইচএসসিতে গণিতে ওই শিক্ষার্থীর প্রাপ্ত নম্বর হবে ১০০।
করোনা মহামারীর কারণে ২০২০ সালে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা না হওয়ায় সব পরীক্ষার্থীকে পাস করানো হয়। তখন এসএসসি, জেএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের গড় মূল্যায়ন করে ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছিল। পরের বছর কয়েকটি বিষয়ের পরীক্ষা নিয়ে বাকি বিষয়ের ফল একইভাবে তৈরি করা হয়েছিল।
এ বিষয়ে আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের সমন্বয়ক ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর তপন কুমার সরকার বলেন, ‘করোনাভাইরাসের সময় পরীক্ষা বাতিল করা হয়। পরে পূর্বের পরীক্ষার সাবজেক্ট ম্যাপিং প্রক্রিয়ায় ফল প্রকাশ করা হয়। এবার সেই পদ্ধতিতে ফল তৈরি করা হবে। সেই প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সিদ্ধান্ত এলে দ্রুত সময়ের মধ্যে ফল প্রকাশ করা হবে।’
এ বছর এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হয়েছিল জুন মাসের ৩০ তারিখে। জুলাইয়ের ১৬ তারিখ পর্যন্ত পরীক্ষা ঠিকঠাকভাবেই সম্পন্ন হয়। কিন্তু কোটা আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রথমে ১৮ জুলাইয়ের পরীক্ষা এবং পরে ২১, ২৩ ও ২৫ জুলাইয়ের পরীক্ষা স্থগিত হয়। এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে সংঘটিত গণ-অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হয় শেখ হাসিনা সরকার।
সামগ্রিক পরিস্থিতির ভিত্তিতে বাকি পরীক্ষাগুলোর তারিখ বেশ কয়েকবার পরিবর্তন করা হয়। সবশেষ নতুন তারিখ নির্ধারণ করা হয় আগামী ১১ আগস্ট। এর মধ্যে পরীক্ষার্থীরা স্থগিত পরীক্ষাগুলো বাতিল করার দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। ২০ আগস্ট সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভবনের নিচে বিক্ষোভ করেন তারা। পরবর্তীতে এসব পরীক্ষা বাতিল করা হয়।
চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষায় ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, কারিগরি বোর্ড ও মাদরাসা বোর্ডের অধীনে মোট ১৪ লাখ ৫০ হাজার ৭৯০ জন অংশগ্রহণ করেন।