সোশ্যাল মিডিয়া বদলে দিচ্ছে শিশু-কিশোরদের ভাষার ব্যবহার 

অনলাইন ডেস্ক: সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিস্তার ও এর প্রভাবের ফলে শিশু ও কিশোরদের ভাষা ব্যবহারের ধরনে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ডিজিটাল যুগে সামাজিক মাধ্যম কেবল যোগাযোগের মাধ্যম নয়, বরং ভাষাগত সংস্কৃতিরও একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে।

এক গবেষণায় দেখা যায়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তরুণরা দ্রুত ও সহজে যোগাযোগের জন্য বিভিন্ন স্ল্যায়ং ও সংক্ষিপ্ত রূপ ব্যবহার করে থাকে। যেমন, ‘LOL’ (Laugh Out Loud), ‘BRB’ (Be Right Back), ‘TNTL’ (Trying Not To Laugh), ‘ISTG’ (I Swear To God) ইত্যাদি। এই ধরনের ভাষা ব্যবহার তাদের ডিজিটাল পরিচিতি ও বন্ধুত্বের অনুভূতি প্রকাশ করে। ইমোজি ও জিফের মাধ্যমে তরুণরা তাদের অনুভূতি ও প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করে থাকে। এগুলো ভাষাগত অভিব্যক্তির পরিপূরক হিসেবে কাজ করে, যা তাদের যোগাযোগকে আরো প্রাণবন্ত ও অর্থবহ করে তোলে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাষার গতি ও গঠন পরিবর্তিত হয়েছে। তরুণরা সংক্ষিপ্ত, সরল ও দ্রুত পাঠযোগ্য ভাষা ব্যবহার করে থাকে, যা তাদের দ্রুত যোগাযোগের প্রয়োজনীয়তা পূরণ করে। এই পরিবর্তন তাদের চিন্তা ও ভাষাগত দক্ষতাকে প্রভাবিত করে, যা কখনো কখনো গভীর বিশ্লেষণমূলক চিন্তা ও ভাষাগত দক্ষতার অভাব সৃষ্টি করতে পারে।

প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক জিনাত সানজিদা নাসরিন বলেন, শিশু-কিশোররা শুদ্ধ ভাষায় কথা বলছে না, আর লেখার সময় মেসেজ-এর শর্ট শব্দ ব্যাবহার করে, যেমন- ‘you’ কে ‘u’, ‘to’ কে ‘2’ লেখে। অটো কারেকশন ব্যবহারের কারণে শুদ্ধ বানান শেখা এবং ব্যবহার হচ্ছে না। স্ল্যায়ং ল্যাংগুয়েজ বা ভাষার অপব্যবহারের প্রচলন মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে গেছে। শিশু-কিশোররা এখন মাইন্ডফুল না, সবসময় অস্থির থাকে।

ছবি- স্টোরি-স্ট্যাটাসে কতটা লাইক পড়ছে তা বারবার চেক করে, বেশি পড়লে খুশি হয়, কম হলে নিজের সাথে নিজেই প্রতিক্রিয় দেয়। আত্মবিশ্বাস কমে যাচ্ছে, আউটসাইড থেকে ভ্যালিডেশান খোঁজে, আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে ভোগে। নিজেদের আইসোলেট করে ফেলে, অসামাজিক হয়ে যায়, নেগেটিভ থট বেশি আসে, পজিটিভিটি থাকে না, কোনো কাজ অথবা শখের প্রতি বেশি দিন আগ্রহ থাকে না, ইনকন্সিস্টেন্ট বিহেভিয়ার দেখা যাচ্ছে।

নেতিবাচক প্রভাব বয়সভেদে ভিন্ন দেখা যায়। অতিরিক্ত স্ল্যায়ং ও সংক্ষিপ্ত রূপের ব্যবহার তরুণদের আনুষ্ঠানিক ভাষা দক্ষতার উন্নতি বাধাগ্রস্ত করতে পারে। এটি তাদের একাডেমিক ও পেশাগত জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। অনলাইনে যোগাযোগের মাধ্যমে তরুণরা মুখোমুখি যোগাযোগের অভ্যাস থেকে দূরে সরে যেতে পারে, যা তাদের সামাজিক দক্ষতা ও সহানুভূতির অভাব সৃষ্টি করতে পারে।

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক রুবিনা হক বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মাধ্যমে তরুণদের ভাষা ব্যবহারে পরিবর্তন এসেছে, যা তাদের চিন্তা, সামাজিক সম্পর্ক ও ভাষাগত দক্ষতাকে প্রভাবিত করছে। এটি যেমন ইতিবাচক, তেমনি নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। অতএব, তরুণদের সঠিকভাবে গাইড করা ও ডিজিটাল সাক্ষরতা বৃদ্ধির মাধ্যমে তাদের ভাষাগত ও সামাজিক দক্ষতা উন্নত করা প্রয়োজন।’

এ থেকে উত্তরণে উপায় জানতে চাইলে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ও মনোচিকিৎসক ডা. আহমেদ হেলাল বলেন, ‘প্রযুক্তি উৎকর্ষে শিশুদের অনেক কিছু এখন হাতের নাগালে। চাইলে একটি স্মার্টফোনের মাধ্যমে সারা দুনিয়ায় ঘুরে আসতে পারবে ঘরে বসেই। শিশুদের যতটা সম্ভব মোবাইল ফোন থেকে দূরে রাখতে হবে। বাবা-মাকে কোয়ালিটি সময় বেশি দিতে হবে। শিশুদের দেশীয় সামাজিক মূল্যবোধ বুঝাতে হবে। তাহলেই শিশু এমন ভাষায় কথা বলা থেকে দূরে থাকবে।

Related Articles

Back to top button