মুশফিক, মিরাজ, লিটন, হাসান…বাংলাদেশের সিরিজ জয়ের নায়কেরা

অনলাইন ডেস্ক: রাওয়ালপিন্ডি—পাকিস্তানের এ শহরটি বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে বিশেষ জায়গা নিয়েই থাকবে। পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট জয়ের পর এখানেই তাদের বিপক্ষে প্রথম সিরিজ জয়ের কীর্তিও গড়েছে বাংলাদেশ। রাওয়ালপিন্ডিতে গতকাল শেষ হওয়া দ্বিতীয় টেস্ট জিতে পাকিস্তানকে ধবলধোলাই করেছে নাজমুল হোসেনের দল। দুর্দান্ত এই সিরিজ জয়ে নায়কদের অবদানে একটু চোখ বুলিয়ে আসা যায়—
সাদমান ইসলাম
জাকির হাসানকে (ডানে) নিয়ে ওপেনিংয়ে ভালো ভিত গড়েছেন সাদমান ইসলাম
জাকির হাসানকে (ডানে) নিয়ে ওপেনিংয়ে ভালো ভিত গড়েছেন সাদমান ইসলামএএফপি
৯*, ১০ ও ২৪—পাকিস্তানে দুই টেস্টের সিরিজে সর্বশেষ তিন ইনিংসে সাদমান ইসলামের রান। মানুষ শেষটাই বেশি মনে রাখে, এ কারণেই তো একটা প্রবাদ মাঝেমধ্যেই শোনা যায়—শেষ ভালো যার সব ভালো তার। রাওয়ালপিন্ডিতে দ্বিতীয় টেস্ট জিতে সিরিজ জেতা বাংলাদেশের ‘শেষ ভালোর সঙ্গে সব ভালো’ও হয়েছে। তবে এই শেষ ভালোর সুরটা শুরুতে বেধে দিতে বড় ভূমিকা ছিল সাদমানের। রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তান ৬ উইকেটে ৪৪৮ রান তুলে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে। এরপরই অনেকে ‘বাংলাদেশ আর পারবে না’ বলে ধ্বনি তুলেছিলেন। প্রথম ইনিংস খেলতে নেমে বাংলাদেশ ৫৩ রানে ২ উইকেট হারিয়ে ফেলার পর আওয়াজটা আরও জোরাল হয়। কিন্তু সেই দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলে সেই আওয়াজকে ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর করতে ভূমিকা রাখেন সাদমান। ৭ রানের জন্য সাদমানের ব্যক্তিগত সাফল্যের খেরোখাতায় একটি সেঞ্চুরি যোগ হয়নি। তবে ১২ চারে তাঁর ১৮৩ বলে ৯৩ রানের ইনিংসটি মুশফিককে দিয়েছিল বড় ইনিংস খেলার ভিত, বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে পেয়েছিল ৫৬৫ রানের সংগ্রহ।

মুশফিকুর রহিম
প্রথম টেস্টে ১৯১ রানের ইনিংস খেলেছেন মুশফিকুর রহিম
প্রথম টেস্টে ১৯১ রানের ইনিংস খেলেছেন মুশফিকুর রহিমএএফপি
‘মিস্টার ডিপেন্ডাবল’—দলের প্রয়োজনে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে লড়াই করে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশের ক্রিকেট মহলে তাঁর ডাকনাম। রাওয়ালপিন্ডিতে সিরিজের প্রথম টেস্টে আরও একবার দল মুশফিকুর রহিমের দিকে এমন কিছুর জন্য তাকিয়ে ছিল। মিস্টার ডিপেন্ডাবল নিরাশ করেননি। সময়ের প্রয়োজনে খেললেন অসাধারণ এক ইনিংস। আউট হওয়ার আগে করলেন ৩৪১ বলে ১৯১ রান। ৮ ঘণ্টা ৪২ মিনিটের লম্বা ইনিংসটিতে মেরেছেন ২২টি চার ও ১টি ছয়। আক্ষেপ শুধু একটাই—৯ রানের জন্য ক্যারিয়ারের চতুর্থ ডাবল সেঞ্চুরি পাননি মুশফিক। রাওয়ালপিন্ডি টেস্ট বাংলাদেশ ১০ উইকেটে জেতায় দ্বিতীয় ইনিংসে আর ব্যাটিংয়ে নামতে হয়নি মুশফিককে। দ্বিতীয় টেস্টের দুই ইনিংসে করেছেন ৩ ও অপরাজিত ২২ রান।

মেহেদী হাসান মিরাজ
পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজসেরা হয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ
পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজসেরা হয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজএএফপি
কখনো ওপেনার, কখনো মিডল অর্ডার, কখনো লোয়ার অর্ডার, কখনো শুধু বোলার, কখনো নিজের আসল পরিচয় অলরাউন্ডারের ভুমিকায়—দল যখন যেভাবে তাঁকে চায়, সে ভূমিকা নিতেই সব সময় তৈরি থাকেন মেহেদী হাসান মিরাজ। এবারের পাকিস্তান সফরে নিজের অলরাউন্ডার সত্ত্বাটার প্রমাণ আরও একবার খুব ভালোভাবে দিলেন তিনি। প্রথম টেস্টে পাকিস্তানের প্রথম ইনিংসে বল হাতে ১ উইকেট নিয়েছেন। বোলিংয়ে যেটুকু ঘাটতি ছিল, সেটা পুষিয়ে দিলেন ব্যাট হাতে। খেলেছেন ৬ চারে ১৭৯ বলে ৭৭ রানের ইনিংস। দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট নেওয়ার পর ব্যাট হাতে করেছেন ১২৪ বলে ৭৮ রান। বাংলাদেশ ৬ উইকেটে ২৬ রান হারিয়ে ফেলার পর দলকে খাদের কিনারা থেকে তুলতে লিটন দাসের সঙ্গে মিলে সপ্তম উইকেটে করেছেন রেকর্ড গড়া ১৬৫ রানের জুটি। দ্বিতীয় ইনিংসে তিন পেসার মিলে পাকিস্তানের ১০ ব্যাটসম্যানকে আউট করায় মিরাজের পাতে পড়েনি কোনো উইকেট। ৬ উইকেটে জেতা দ্বিতীয় টেস্টে তাঁকে ব্যাটিংয়েই নামতে হয়নি। তবে দেশের বাইরে প্রথমবারের জন্য সিরিজ–সেরার পুরস্কার জয়ের জন্য আগে যা করেছেন, সেটাই ছিল যথেষ্ট।

আরও পড়ুন
লর্ডসে ফাইনালের ডাক শুনতে পাচ্ছে চারে ওঠা বাংলাদেশও
০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
লর্ডসে ফাইনালের ডাক শুনতে পাচ্ছে চারে ওঠা বাংলাদেশও

হাসান মাহমুদ
দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়েছেন হাসান মাহমুদ
দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়েছেন হাসান মাহমুদএএফপি
শরীফুলের চোট। প্রথম টেস্টে দুর্দান্ত বোলিং করা এই পেসারের দায়িত্বটা নেবেন কে, কেই বা শরীফুলের মতো করে কাঁপন ধরাতে পারবেন পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইন আপে? হাসান মাহমুদের কথা বলছিলেন কেউ কেউ। কিন্তু দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে ১৪ ওভারে ৬০ রান দিয়ে কোনো উইকেট পেলেন না হাসান। অনেকেই একটু হতাশ হলেন। কিন্তু পাকিস্তানের দ্বিতীয় ইনিংসে এগিয়ে এলেন প্রথম টেস্টের দুই ইনিংসে ৩ উইকেট নেওয়া হাসান। ১২ রানে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করা পাকিস্তানকে অল্প রানে বেধে ফেলতে মূল ভূমিকা রেখেছেন তিনিই। পাকিস্তানের দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতেই পরপর দুই ওভারে ২ উইকেট তুলে নেন। পরে আরও ৩ উইকেট নিয়ে ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো ইনিংসে ৫ উইকেট পাওয়ার কীর্তি গড়েন।

নাহিদ রানা
রাওয়ালপিন্ডি।গতির ঝড় পাকিস্তানকে ছিন্নভিন্ন করেছেন নাহিদ রানা
রাওয়ালপিন্ডি।গতির ঝড় পাকিস্তানকে ছিন্নভিন্ন করেছেন নাহিদ রানাএএফপি
রাওয়ালপিন্ডিতে খেলা, যে শহরের সবচেয়ে বিজ্ঞাপন শোয়েব আখতার। গতির কারণে পাকিস্তানের সাবেক ফাস্ট বোলারের ডাকনাম পিন্ডি এক্সপ্রেস। পিন্ডি এক্সপ্রেসের সেই শহরে গতির ঝড় তুলে ক্রিকেট বিশ্বে আলোচনার জন্ম দেন বাংলাদেশের তরুণ ফাস্ট বোলার নাহিদ রানা। এই সিরিজে নিয়মিতই তিনি বল করে গেছেন ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটারের ওপরে। এমনকি ১৫০ কিলোমটার গতিও তুলেছেন নাহিদ। গতির ঝড় তুললেও দুই ইনিংস মিলিয়ে প্রথম টেস্টে পেয়েছেন মাত্র ১ উইকেট। দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসেও তাঁর উইকেট ছিল ১টি। তবে দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে পরিশ্রমের ফল পেয়েছেন নাহিদ, নিয়েছেন ৪ উইকেট। পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে গেছেন পুরো ইনিংস–ঝুড়ে। তাঁর বাউন্সার সামলাতে পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানদের একটি উদাহরণ হতে পারে মোহাম্মদ রিজওয়ানের হেলমেটে লাগা।

Related Articles

Back to top button