বিদ্যুৎ খাতে মাফিয়া সিন্ডিকেট

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিগত সরকারের আমলে বিদ্যুৎ খাতের লুটপাটের কথা আমরা জানি। বিভিন্ন সময়ে যুগান্তরে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। লেখা হয়েছে সম্পাদকীয়। তবে এ খাতে লুটপাটের চিত্র কতটা ভয়াবহ, তা বেরিয়ে আসছে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ওই সরকারের পতনের পর। গতকাল যুগান্তরে প্রকাশিত শীর্ষ সংবাদটি ছিল এ বিষয়ে।

এতে যুগান্তরের নিজস্ব অনুসন্ধানে আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরে বিদ্যুৎ খাতের ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির সার্বিক চিত্র উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ খাতে দুর্নীতির নেপথ্যে ছিল একটি মাফিয়া সিন্ডিকেট।

একটি বিদ্যুৎ প্রকল্প হাতে নেওয়া থেকে শুরু করে অনুমোদন পর্যন্ত কমপক্ষে ২০ ধাপে এ সিন্ডিকেটকে টাকা দিতে হতো। এক যুগ ধরে এর নেতৃত্ব দিয়েছেন সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। আর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বসে সব অপকর্মকে নির্বিঘ্ন করতে যারা কলকাঠি নাড়তেন, তারা হলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, সাবেক মুখ্যসচিব আবুল কালাম আজাদ ও আহমেদ কায়কাউস। পিডিবির বর্তমান চেয়ারম্যান, সাবেক দুই চেয়ারম্যান ও একাধিক প্রধান প্রকৌশলীর নামও উঠে এসেছে এ সিন্ডিকেটের সদস্য হিসাবে।

আমরা জানি, বিগত সরকারের আমলে আপৎকালীন সময় তথা ২-৩ বছরের জন্য রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন দেওয়া হলেও দফায় দফায় এর মেয়াদ বাড়িয়ে সক্ষমতার অর্ধেক বিদ্যুৎ না নিয়েও বিপুল অঙ্কের টাকার ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ খাতে দুরবস্থার জন্য এই ক্যাপাসিটি চার্জের নামে দুর্নীতি বহুলাংশে দায়ী। ছোট-বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেও নেওয়া হয়নি কোনো ব্যবস্থা; উলটো দায়মুক্তি আইন পাশ করিয়ে বিচারের পথ রুদ্ধ করে দেওয়া হয়।

এছাড়া বিগত সরকারের আমলে কয়েকটি বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মিত হলেও যথাযথ পদক্ষেপের অভাবে এবং প্রয়োজনীয় সঞ্চালন ব্যবস্থা গড়ে না তোলার কারণে এর পুরোপুরি সুফল জনগণ পাচ্ছে না। উৎপাদন বাড়লেও এখনো দেশে বিদ্যুতের সংকট কাটেনি।

দেশে নতুন সরকার আসায় আজ আমরা আশাবাদী, এসব অনিয়ম-দুর্নীতির বিচার হবে। এ খাতের মাফিয়া সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত সবার সাজা হবে। সেই সঙ্গে এ খাতের দুর্নীতি-সহায়ক নীতির অবসান ঘটিয়ে বিদ্যুৎ কাঠামোকে ঢেলে সাজাতে হবে। ব্যয়বহুল ও অপ্রয়োজনীয় কেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দিতে হবে। দেশের বিদ্যুৎ খাত মাফিয়া সিন্ডিকেটমুক্ত হোক।

Related Articles

Back to top button