শেয়ার বাজারে গতি ফিরছে খুলছে নতুন বিও হিসাব

  • গত সপ্তাহে ডিএসইতে গড় লেনদেন বেড়েছে ৫৩ দশমিক ৫৭ শতাংশ
  • নতুন বিও হিসাব খোলা হয়েছে ৫ হাজার ৬৪৭টি,
  • শেয়ারশূন্য বিও হিসাবের সংখ্যা কমেছে ৪ হাজার ৩৪৭টি
  • এখন সময় সরকারি ভালো কোম্পানিগুলোকে বাজারে নিয়ে আসা: আবু আহমেদ
  • দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে গতি ফিরছে শেয়ার বাজারে। দীর্ঘদিন ধরে নিষ্ক্রিয় ছিলেন, এমন বিনিয়োগকারীরা বাজারে সক্রিয় হওয়ার পাশাপাশি নতুনরাও বাজারে আসছেন। যার ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে মূল্যসূচকে ও লেনদেনে। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, দীর্ঘদিন ধরে শেয়ার বাজারে মন্দাবস্থা বিরাজ করছিল। কারসাজির কারণে অনেক বিনিয়োগকারী পথে বসে যায়। কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর বাজার নিয়ে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরছে। সংশ্লিষ্টরা বলেন, বর্তমানে শেয়ার বাজারের উল্লেখযোগ্য দুটি দিক হচ্ছে-এক, বিনিয়োগকারীরা সক্রিয় হচ্ছেন; দুই, ভালো মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানির শেয়ারের দিকে ঝুঁকছেন তারা।
  • শেয়ারবাজারের বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) হিসাব সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান সেন্ট্রাল ডিপজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) তথ্য অনুযায়ী, গত সাত কার্যদিবসে শেয়ার বাজারে নতুন বিও হিসাব খোলা হয়েছে ৫ হাজার ৬৪৭টি। পাশাপাশি নিষ্ক্রিয় হিসাবগুলোও সক্রিয় হচ্ছে। গত ১১ আগস্ট শেয়ার আছে এমন সক্রিয় বিও হিসাবের সংখ্যা ছিল ১২ লাখ ৮৮ হাজার ২৯৪টি। আর ১৪ আগস্ট এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ লাখ ৯৪ হাজার ২৭২টি। অর্থাৎ, মাত্র তিন কার্যদিবসে ৫ হাজার ৯৭৮টি বিও হিসাব সক্রিয় হয়েছে। এছাড়া, শেয়ারশূন্য বিও হিসাবের সংখ্যাও কমেছে।
  • সিডিবিএলের তথ্য বলছে, ১১ আগস্ট বাজারে শেয়ারশূন্য বিও হিসাবের সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ১৮ হাজার ৫২৩। ১৪ আগস্ট এই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ১৪ হাজার ১৭৬টি। সেই হিসাবে শেয়ারশূন্য বিও হিসাবের সংখ্যা কমেছে ৪ হাজার ৩৪৭টি।
  • শেয়ার বাজারে বিনিয়োগকারীরা সক্রিয় হওয়ায় সূচক ও লেনদেনে-এর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পদত্যাগের পর শেয়ার বাজারে সূচকের বড় ধরনের উত্থান হয়। ঐ সপ্তাহে মাত্র তিন কার্যদিবসে দেশের প্রধান শেয়ার বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বাজার মূলধনে যোগ হয় ৫৮ হাজার কোটি টাকার বেশি। আর প্রধান মূল্যসূচকটি বাড়ে প্রায় ৭০০ পয়েন্ট। তবে গত সপ্তাহে সূচক কমেছে। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, আগের সপ্তাহে অনেক কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে। ফলে গত সপ্তাহে অনেক বিনিয়োগকারী শেয়ার বিক্রি করে মুনাফা তুলেছেন। এতে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।
  • সাপ্তাহিক লেনদেনচিত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত সপ্তাহে মূল্য সূচক মিশ্র থাকলেও লেনদেনের গতি বেড়েছে। সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ২৮২ কোটি ২২ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৮৩৪ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন বেড়েছে ৪৪৭ কোটি ২৬ লাখ টাকা বা ৫৩ দশমিক ৫৭ শতাংশ। দেশের প্রধান এই শেয়ার বাজারে গত সপ্তাহে টাকার অঙ্কে লেনদেনের ভিত্তিতে শীর্ষ ১০টি কোম্পানির তালিকায় রয়েছে-গ্রামীণফোন, ব্র্যাক ব্যাংক, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, রবি, আইএফআইসি ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, টেকনো ড্রাগস, ইউনিলিভার কনজুমার কেয়ার এবং এবি ব্যাংক।
  • পুঁজিবাজারে স্টক ব্রোকারদের সংগঠন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেছেন, দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরেছে। তারা বাজারে আসতে শুরু করেছে। সম্প্রতি পুঁজিবাজারের উন্নয়নে করণীয় শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে ডিবিএ সভাপতি অভিযোগ করেন, বিএসইসির গত দুই সাবেক চেয়ারম্যানের অপেশাদার এবং অনৈতিক কর্মকাণ্ডের ফলে বাজারের কোনো উন্নতি হয়নি। কারসাজির কারণে বাজার নিয়ে বিনিয়োগকারীদের কোনো আস্থা ছিল না। ফলে এখন সময় এসেছে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার।
  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ এ প্রসঙ্গে গতকাল বলেছেন, গত ১৫ বছরে দেশের শেয়ার বাজারে কোনো ভালো কোম্পানি আসেনি। অন্যদিকে, ওটিসি থেকে মূল বাজারে দুর্বল কোম্পানি নিয়ে এসে জুয়া খেলার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতে বিনিয়োগকারী সৃষ্টি হয়নি, হয়েছে জুয়াড়ি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) একজন শক্ত চেয়ারম্যান দরকার। যিনি বাজারকে শক্ত হাতে চালাবেন, কারসাজি মুক্ত করবেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক বলেন, এখন সময় সরকারি ভালো কোম্পানিগুলোকে বাজারে নিয়ে আসা। এতে বাজারের গভীরতা বাড়বে। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা উপকৃত হবেন।

Related Articles

Back to top button