নতুন সংকটে ইউটিউব নাটক

অনলাইন ডেস্ক: দেশের সাম্প্রতিক অবস্থায় ইউটিউবকেন্দ্রিক নাটকের চ্যানেলগুলো বড় ধরনের সংকটের মুখে পড়েছে। চ্যানেলগুলো থেকে আপাতত নতুন নাটক নির্মিত হচ্ছে না। এই মুহূর্তে নাটকের লগ্নিকারীরা নতুন করে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। তাই পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও অনেক চ্যানেল কর্তৃপক্ষ শুটিং বাতিল করেছে। এমন অবস্থায় নাটক নিয়ে নতুন করে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

জানা যায়, নাটকের বড় বিনিয়োগকারীরা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তাঁরা নিয়মিত নাটকে বিনিয়োগ করতেন। যাঁদের অনেকেই এখন গা ঢাকা দিয়েছেন। অনেকেই বড় বাজেটের বিনিয়োগ থেকে সরে এসেছেন। কারণ, এই মুহূর্তে দর্শক দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে জানতেই আগ্রহী। বড় বাজেটের নাটক দিয়ে রাজনৈতিক ঘটনার ভিডিওর সঙ্গে টিকে থাকা কঠিন। ইতিমধ্যে সিএমভি, পিকক ফান, দুরবিন, জাগো এন্টারটেইনমেন্ট ইউটিউব চ্যানেলসহ বেশ কিছু চ্যানেল নতুন নাটক আপলোড করলেও সেভাবে দর্শক পাচ্ছে না। অন্য সময়ে নাটকের কোটি ভিউ হলেও এখন ২০ লাখ ভিউ অতিক্রম করতে পারছে না। বেশির ভাগ নাটকের ভিউ ৫ লাখের আশপাশে।

ইউটিউব চ্যানেলের মধ্যে তারকাবহুল নাটক নির্মাণ করেছে সিএমভি। আগামী দুই মাসে চ্যানেলটির ১০টির বেশি নাটকের শুটিং ছিল। আপাতত কোনো নাটকের শুটিং হচ্ছে না। বর্তমানে তারা নির্মাণের চেয়ে হাতে থাকা নাটকগুলোর মুক্তি নিয়েই চিন্তিত। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শাহেদ আলী বলেন, ‘এখনো অস্থির একটা পরিবেশ চলছে। নাটক মুক্তি দেওয়ার মতো পরিস্থিতি নেই। বিজ্ঞাপন কমে গেছে। যে কারণে বেশির ভাগ শুটিংই বন্ধ। উপায় না দেখে শিডিউল বাতিল করতে হয়েছে। আমরা বড় বাজেটে কাজ করি। এই মুহূর্তে ঝুঁকি নিতে চাই না। পরিস্থিতি বুঝেই সিদ্ধান্ত নেব। এমন নয় যে একদমই নির্মাণ থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। আমরা এখন গল্প দেখছি। স্থবিরতা কাটলেই শুটিংয়ে যাব।’

ইউটিউবকেন্দ্রিক চ্যানেলগুলোতে মোশাররফ করিম, জিয়াউল ফারুক অপূর্ব, মেহজাবীন চৌধুরী, নিলয় আলমগীর, ফারহান আহমেদ জোভান, তৌসিফ মাহবুব, মুশফিক আর ফারহান, তানজিন তিশা, সাবিলা নূর, সাফা কবির, খায়রুল বাসার, জান্নাতুল হিমি, ইয়াশ রোহান, তাসনিয়া ফারিণ, সাদিয়া আয়মান, তটিনীসহ বেশ কিছু অভিনয়শিল্পীর কদর বেশি।

এসব শিল্পীকে নিয়ে নিয়মিত নাটক নির্মাণ করে ইউটিউব চ্যানেল গোল্লাছুট। এর স্বত্বাধিকারী শাহিন কবির টুটুল বলেন, ‘বিনোদনের চেয়ে এখন দর্শক রাজনীতিনির্ভর ভিডিও বেশি দেখছেন। আমাদের হাতে নাটক প্রস্তুত রয়েছে। সেগুলোই রিলিজ পাবে। এখন ফেসবুকে নাটকের কিছু রিলিজ দিলে কে দেখবেন? দর্শক বিনোদন নিয়ে আগ্রহী হলেই আমরা নিয়মিত হব। এই মুহূর্তে অনেক অভিনয়শিল্পী শুটিংও করতে চাইছেন না।’ তবে কবে শুটিং শুরু করবেন, সেই পরিকল্পনা জানাতে পারলেন না তিনি।
অন্যদিকে ক্লাব ইলেভেন এন্টারটেইনমেন্ট, সুলতান, কেএসসহ বেশ কিছু চ্যানেল কর্তৃপক্ষ জানায়, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেই পুরোদমে কাজ শুরু করবে তারা।

এক মাসের বেশি সময় ধরে নাট্যাঙ্গনে অস্থির অবস্থা। বড় ধরনের ক্ষতির মুখে নাটক। ১০ আগস্টের পর পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও এখনো ৮০ শতাংশের বেশি নাটকের শুটিং কম হচ্ছে বলে জানালেন প্রযোজকদের নেতা সাজু মুনতাসীর। তিনি জানান, এখনো আতঙ্কে দিন কাটছে পরিচালক, শিল্পী ও কলাকুশলীদের। এর মধ্যে অনেক বিনিয়োগকারী পালিয়েছেন।

সাজু বলেন, ‘অনেক সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা নাটকে বিনিয়োগ করেছেন। ৭ লাখ টাকার নাটক বানিয়েছেন ১৫ লাখ টাকা দিয়ে। এটা শুরু করেন তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাঁরা অনেকেই এখন পালাতক। তাঁদের ইউটিউব চ্যানেল থেকে নতুন নাটক আসবে না। এখন পরিস্থিতি কোন দিকে যায়, সেটা দেখেই নতুন ও পেশাগত বিনিয়োগকারীরা আসবেন। এ অবস্থা কাটতে সময় লাগবে।’

নাম প্রকাশ না করা শর্তে ক্ষমতাসীন দলের এক কর্মকর্তা জানান, সঞ্চয়ের বড় অংশই ইউটিউব নাটকে বিনিয়োগ করেন। তাঁর বিনিয়োগের পরিমাণ ৫০ লাখ টাকার মতো। নিয়মিত নাটক বানিয়ে ইউটিউবে দিলেই সেই অর্থ ক্রমে ফিরে আসার স্বপ্ন দেখছিলেন। কিন্তু এক মাসের বেশি সময় ধরে কোনো নাটকই নির্মাণ করতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘এখন এমন অবস্থা, নির্মাণের চেয়ে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিয়েই বেশি চিন্তিত। অনেকেই ফোন দিয়ে হুমকি দিচ্ছেন। একটা আশা ছিল, নিয়মিত নাটক বানালে হয়তো আগের বিনিয়োগ ক্রমেই ফিরে পাব। সেই পথই মনে হয় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। শুটিং বাতিল করেছি।’

Related Articles

Back to top button