বাংলাদেশ-চীন অংশীদারিত্বের রূপরেখা তুলে ধরলেন প্রধান উপদেষ্টা

অনলাইন ডেস্ক: চীন সফর শেষে ঢাকায় ফিরে এসেই কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। রোবাবর তিনি চীনা রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন। তাদের এ বৈঠক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের গতিকে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে গেল।

চীন সফরের পরপরই দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যে কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু হয়েছে, তা বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা বলে মনে করা হচ্ছে।

এদিনের বৈঠকে উত্থাপিত বিষয়গুলোর মধ্যে ছিল—অর্থনৈতিক অঞ্চল, স্বাস্থ্যখাত, কৃষি, পরিবহণ ও সংস্কৃতি। এতে প্রতিটি খাতেই দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশের কাঠামোগত পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।

বৈঠকে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল—কথিত প্রতিশ্রুতিগুলোকে কাগজ থেকে মাঠ পর্যায়ে নিয়ে আসা। উভয় পক্ষের বক্তব্যেই স্পষ্ট যে, এবার আর দুই-তিন বছর অপেক্ষা নয়; এখনই প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন শুরু করতে চায় উভয় দেশ।

অর্থনৈতিক অঞ্চল ও অবকাঠামো:

আলোচনা শেষে জানানো হয়েছে, মোংলা ও আনোয়ারার অর্থনৈতিক অঞ্চল দুটি নিয়ে প্রস্তুতি প্রায় শেষ। প্রস্তুতি সম্পন্ন হলেই তা দ্রুত ডেভেলপারদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এ দুটি অঞ্চল চীনকে শিল্প ও রপ্তানি কেন্দ্র গড়ার সুযোগ দেবে। অন্যদিকে বাংলাদেশকে দেবে কর্মসংস্থান ও প্রযুক্তি হস্তান্তরের নতুন পথ।

সমুদ্রযান ও পরিবহণ সংযোগ:

এদিকে চীন থেকে চারটি নতুন জাহাজ সংগ্রহের চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে, যা জুনের মধ্যেই বাস্তবায়িত হবে বলে আশ্বাস মিলেছে। একইসঙ্গে কুনমিং–চট্টগ্রাম সরাসরি ফ্লাইট চালুর পরিকল্পনাও চলছে, যা ব্যবসা ও চিকিৎসা ভ্রমণ—দু’টোতেই বাড়তি সুবিধা দেবে।

চিকিৎসা ও জনস্বাস্থ্য:

চট্টগ্রামে বিশেষ বার্ন ইউনিটের পাশাপাশি ১,০০০ শয্যার হাসপাতাল নির্মাণে চীনের অঙ্গীকার বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতের জন্য এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এছাড়া মেডিকেল ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করার চেষ্টাও উল্লেখযোগ্য।

সংস্কৃতি ও শিক্ষা:

চাইনিজ কালচারাল সেন্টার ও ভাষা ইনস্টিটিউট স্থাপনের প্রস্তাব ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সাংস্কৃতিক মেলবন্ধনের ক্ষেত্র তৈরি করবে। যুবকদের জন্য এ এক বিশেষ জানালা খুলে দেবে চীনা শিক্ষা ও স্কিল উন্নয়নের দিকে।

পানি সম্পদ ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা:

দুই দেশ মিলে ৫০ বছরের জল ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা হাতে নিচ্ছে, যার মধ্যে রয়েছে তিস্তা নদী ব্যবস্থাপনা। ভারতের সঙ্গে আলোচিত এ ইস্যুতে চীনের সক্রিয় ভূমিকা কূটনৈতিকভাবে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ।

বাণিজ্যিক ও কৃষি অগ্রগতি:

বৈঠক শেষে বলা হয়েছে, এই মৌসুমেই বাংলাদেশ থেকে চীনে আম রপ্তানি শুরু হচ্ছে; পরের বছর যাচ্ছে কাঁঠাল। প্রধান উপদেষ্টার কথায়, ‘আমি নিজের হাতে একটি ঝুড়ি পাঠাবো প্রেসিডেন্ট শি-কে’।

ড. ইউনূসের এই মন্তব্য নিছক রসিকতা নয়, বরং ব্যক্তিগত কূটনৈতিক যোগাযোগের একটি স্পষ্ট বার্তা।

রেল খাতে বিনিয়োগের প্রস্তাব:

এদিকে চট্টগ্রাম ও সৈয়দপুরে লোকোমোটিভ উৎপাদন ও রক্ষণাবেক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তাব চীনকে যুক্ত করবে বাংলাদেশের রেল খাতে প্রযুক্তি সহায়তায়। একইসঙ্গে লোকাল ট্রেন চালক ও ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য প্রশিক্ষণ কর্মসূচি হাতে নেয়ার কথাও বলা হয়েছে।

চীনা কূটনীতিকের সঙ্গে এই বৈঠক এবং এতে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো নির্দেশ করে যে, বাংলাদেশ-চীন অংশীদারিত্ব এখন এক নতুন স্তরে প্রবেশ করছে—যেখানে শুধু অর্থনৈতিক বিনিয়োগ নয়, রয়েছে পরিকাঠামো, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও স্বাস্থ্যখাতেও দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলবে এমন পরিকল্পনা।

Related Articles

Back to top button