বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি আনভীরের বিরুদ্ধে এবার ৫০ কোটি টাকার চাঁদাবাজি মামলা
প্রাচ্যবাণী ডেস্ক: বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীরের বিরুদ্ধে এবার ৫০ কোটি টাকা চাঁদা দাবির মামলা দায়ের করেছেন একজন ভুক্তভোগী। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সোহেল রানা বাদী হয়ে খিলক্ষেত থানায় মামলাটি করেছেন। মামলায় বসুন্ধরা গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক হত্যা, চাঁদাবাজিসহ ২০ মামলার আসামি জামাল হোসেন মিয়া (৪৫), বসুন্ধরা গ্রুপের জিএম আমিনুল (৪২), রূপগঞ্জের শীর্ষ সন্ত্রাসী হত্যা, ধর্ষণ, চাঁদাবাজিসহ ৫২ মামলার আসামি মোশারফ হোসেন মোশা (৪৭), (যিনি একসময় হাতেপায়ে ধরে রূপগঞ্জের এমপি গোলাম দস্তগীর গাজীর হয়ে কাজ করতেন, এখন করছেন বসুন্ধরা গ্রুপের হয়ে )ও রূপগঞ্জের আরেক সন্ত্রাসী দুলাল (৫০)-সহ অজ্ঞাতনামা ১০০ থেকে ১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। ফরিদপুরের নগরকান্দা এলাকার সন্ত্রাসী জামাল হোসেন মিয়া তৎকালীন সংসদের উপনেতা সাজেদা চৌধুরীর গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ রয়েছে। টাকার লোভে বসুন্ধরা গ্রুপসহ বিভিন্ন শিল্পগ্রুপের হয়ে ভাড়ায় খাটে সন্ত্রাসী জামাল।
বাদী এজাহারে উল্লেখ করেন, খিলক্ষেতের বড়ুয়া মৌজার একটি জমিতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের গার্ডরুম ও বিলবোর্ড ছিল। ব্যবসায়িক বিরোধের জের ধরে বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরের নির্দেশে কিছু লোক ওই প্রতিষ্ঠানের কাছে ৫০ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিল। গত ৬ এপ্রিল বড়ুয়া মৌজায় ওই প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তিতে বেআইনিভাবে প্রবেশ করে জোরপূর্বক দখলের চেষ্টা করে। যার পরিপ্রেক্ষিতে ওইদিন একটি মামলা করা হয়। যার তদন্ত চলমান আছে। আগের ঘটনার ধারাবাহিকতায় গত সোমবার (২৯ এপ্রিল) সায়েম সোবহান আনভীরের নির্দেশে চিহ্নিত সন্ত্রাসী জামাল হোসেন মিয়া, আমিনুল, মোশারফ হোসেন মোশা ও দুলালের নেতৃত্বে ১০০ থেকে ১৫০ জন দুর্বৃত্ত ওই জমিতে বেআইনিভাবে প্রবেশ করে। তারা লাঠিসোটা, লোহার রড, দেশীয় অস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ঘটনাস্থলে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সিকিউরিটি গার্ড শাহ আলমকে বেধড়ক পেটায়। অস্ত্রশস্ত্র দেখিয়ে মারধর ও প্রাণনাশের হুমকি দেয়। ঘটনাস্থলে থাকা বিলবোর্ড ভাঙচুর করে লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি সাধন করে। এ সময় সন্ত্রাসীদের অনেকের কোমরে পিস্তল ও হাতে শটগান দেখা যায়।
বাদী এজাহারে আরও উল্লেখ করেন, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের আহত নিরাপত্তাকর্মী শাহ আলম বিষয়টি তার সিকিউরিটি ইনচার্জ শামসুল হককে জানান। তিনি খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাওয়া মাত্রই আসামি মোশারফ শামসুল হকের ওপর চড়াও হয়ে পিস্তল ঠেকায়। এ সময় জামাল হোসেন মিয়া বলতে থাকেন ‘তোর চেয়ারম্যানকে বলবি ৫০ কোটি টাকা চাঁদা না দিলে এই জমিতে কেউ প্রবেশ করতে পারবে না, তোর চেয়ারম্যানকে প্রাণে মেরে ফেলব। এটা আনভীর ভাইয়ের অর্ডার।’ এ সময় শামসুল হকের পকেটে থাকা মানিব্যাগসহ ১৬ হাজার ২৫০ টাকা ও ব্যবহৃত মোবাইল ছিনিয়ে নেয় আসামি দুলাল। আসামি আমিনুল পেছন থেকে সজোরে লাথি মেরে সিকিউরিটি ইনচার্জ শামসুলকে মাটিতে ফেলে দেয়। এ সময় অজ্ঞাত ১০-১২ জন সন্ত্রাসী তাদের হাতে থাকা লোহার রড, কাঠের বাটামসহ দেশীয় অস্ত্র দিয়ে শামসুলকে বেধড়ক পেটায়। এতে শামসুলের শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারাত্মক যখম হয় এবং তিনি মেরুদণ্ডে প্রচণ্ড আঘাত পেয়ে একপর্যায়ে জ্ঞান হারান। ঘটনাস্থল থেকে নিরাপত্তাকর্মী শাহ আলম তার অফিসে খবর দিলে ওই শিল্পগ্রুপের এজিএম আশিকুর রহমান খিলক্ষেত থানার ওসিকে মোবাইলে বিষয়টি জানান। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছলে আসামিরা প্রকাশ্যেই চিৎকার করে বলতে থাকে ‘তোদের চেয়ারম্যানকে কুপিয়ে টুকরো টুকরো করে ফেলব।’ কয়েকজন সন্ত্রাসী পুলিশের সামনে অস্ত্র বের করে কাপড় খুলে নানা অঙ্গভঙ্গি করতে থাকে। পরে পুলিশ সন্ত্রাসীদের এলাকা ত্যাগ করতে বললে তারা বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার দিকে চলে যায়। পরবর্তীতে আহত শামসুলকে উদ্ধার করে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। খিলক্ষেত থানায় ৩০ এপ্রিল পেনাল কোড ১৮৬০-এর ১৪৩, ৪৪৭, ৩২৩, ৩২৫, ৪২৭, ৩৭৯, ৩৮৫, ৫০৬, ১১৪ ও ৩৪ ধারায় রেকর্ড হওয়া মামলাটির নম্বর ২০।
আহত সিকিউরিটি ইনচার্জ শামসুল হাসপাতালে সাংবাদিকদের বলেন, কর্মকর্তা আশিক আমাকে ফোন করে বলেন, আমাদের বড়ুয়ায় যে জমিটা আছে, সেখানে কী সমস্যা হয়েছে, সেটা গিয়ে দেখেন। আমি গিয়ে দেখি জমিতে লাগানো একটি বিলবোর্ড ছিল; সেটা সাদা গেঞ্জি পরিহিত ও বসুন্ধরা গ্রুপ এবং বসুন্ধরা কিংসের লোগোযুক্ত ছাতা মাথায় থাকা একদল লোক ভাঙার চেষ্টা করছে। আমি অফিসে বিষয়টি জানাই। ভাঙচুরের দৃশ্য মোবাইল ফোন দিয়ে ভিডিও করার সময় একটি গাড়িতে করে ১০-১২ জন লোক এসে আমাকে ধরে ফেলে। আমার মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ কেড়ে নেয়। আমাকে এলোপাতাড়ি কিল, ঘুষি ও লাথি মারতে থাকে। আমি মারধরের শিকার হয়ে মাটিতে পড়ে গেলে তারা আমাকে কোমর ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে পা দিয়ে আঘাত করতে থাকে। আমি মারাত্মক আহত অবস্থায় আমাকে না মারার জন্য চিৎকার করতে থাকি। একপর্যায়ে বেহুঁশ হয়ে পড়ে যাই।
এর আগে গত ৬ এপ্রিল ওই গ্রুপের সাইনবোর্ড ভাঙচুর ও জমি দখলের চেষ্টার অভিযোগে খিলক্ষেত থানা পুলিশ কামাল হোসেন (৪২), মো. সোহেল (৩২) ও পরিন হোসেন নামে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। তারা বড়ুয়া মৌজার ৩৯৫১০ খতিয়ানের ১৪৬১১ দাগের জমিতে থাকা বিলবোর্ড কেটে ফেলে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছিল ভাঙ্গারির দোকানদার বাবুকে (৫৫) স্থানীয় সন্ত্রাসী ও বসুন্ধরা গ্রুপের ক্যাডার মাহবুবুর রহমান মিঠু (৩৫) সাইনবোর্ডটি কাটার জন্য পাঠায়। ওই সময় আসামিরা পরস্পরের যোগসাজশে গ্রুপের সম্পত্তিতে অবৈধভাবে প্রবেশ করে বিলবোর্ড কেটে নিয়ে আনুমানিক দুই লাখ টাকার ক্ষতি সাধন করে। খিলক্ষেত থানার ওসি হুমায়ুন কবীর বলেন, আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।