ঈদে বেতন-বোনাস নিয়ে গোলযোগ হতে পারে এমন কারখানা শনাক্ত
নিজস্ব প্রতিবেদক: আসন্ন ঈদুল ফিতরে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস নিয়ে সম্ভাব্য গোলযোগ হতে পারে- গোয়েন্দা তথ্য পর্যালোচনা করে এ রকম কারখানা শনাক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. মাহাবুবর রহমান।
সোমবার (২৫ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর উত্তরাস্থ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান। সংবাদ সম্মেলনে পোশাক কারখানার মালিকদের সংগঠন বিজেএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমএ ও ডিআইএফইসহ অন্যান্য সরকারি সংস্থার প্রতিনিধি, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের পুলিশ সুপারসহ বিভিন্ন পুলিশ কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ প্রধান বলেন, ঈদের আগে কোনো গার্মেন্টসের মালিক বেতন-ভাতা দিতে ব্যর্থ হলে বিকল্প কোনো উপায় বের করার জন্য মালিকপক্ষকে অনুরোধ করা হয়েছে। সম্ভাব্য গোলযোগ হতে পারে- গোয়েন্দা তথ্য পর্যালোচনা করে এ রকম কারখানা শনাক্ত করা হয়েছে। এ ব্যাপারে মালিক, পুলিশ প্রশাসন- কার কী করণীয় সেটাও নির্ধারণ করা হয়েছে। ঈদের আগে যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া কোনো অবস্থাতেই যেন শ্রমিক ছাটাই বা লে-অফ না করা হয়- এ ব্যাপারে মালিকপক্ষকে অনুরোধ করা হয়েছে। তিনি বলেন, আসন্ন ইদুল ফিতর উপলক্ষে বিভিন্ন শিল্প-কলকারখানায় কোনো রকম আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি যেন না ঘটে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে আমরা বৈঠক করেছি। বৈঠকে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেছি। কোন কোন কারখানায় সমস্যা হতে পারে এগুলো গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পর্যালোচনা করা হয়েছে।
‘যদি কোনো কারখানায় সমস্যা হয় তাহলে কার কী করণীয় সে বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। আলোচনা করে কিছু সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে।’ বলেন তিনি।
এই পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, মালিকদের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে ঈদের বোনাস যেন এপ্রিলের শুরুতে দেওয়া হয়। ঈদের ছুটির আগেই যেন মার্চ মাসের বেতন দেওয়া হয়। মালিক ও শ্রমিকদের বোঝাপড়ার ভিত্তিতে ঈদের ছুটি যেন পর্যায়ক্রমে দেওয়া হয় সে অনুরোধ করা হয়েছে। ঈদুল ফিতরে শ্রমিকদের বেতন-ভাতাকে কেন্দ্র করে কোনো অপশক্তি যেন আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটাতে না পারে- এ বিষয়ে গোয়েন্দা কার্যক্রম বৃদ্ধি করে সবাইকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঈদের আগে অনেক শ্রমিক সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করেন। এটির সমাধানে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে- এমন প্রশ্নের জবাবে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ প্রধান মাহাবুবর রহমান বলেন, মালিকপক্ষ হয়তো অসমর্থ হওয়ার কারণে শ্রমিকরা সড়কে নেমে আসে। এসব ক্ষেত্রে বিএজএমঅইএ ও বিএকএমঅইএ পুলিশকে সহয়তা করে। অনেক ক্ষেত্রে এক কারখানার যন্ত্রপাতি অন্য কারখানা মালিক কিনে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস দিয়েছে।
ঈদের ছুটির সময় ফাঁকা কলকারখানা অধ্যুষিত এলাকায় ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের বিশেষ টহল ডিউটির অবস্থা থাকবে। ঈদের ৭ দিন আগে থেকে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় ২৪ ঘণ্টা কন্ট্রোল রুম ও হটলাইন সচল থাকবে (০১৩২০-১৭০০৯৮)। এ সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বিকেএমইএ’র নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সংকট অনেক বেশি, নানান রকমের সংকটে এখন কারখানা আবর্তিত। ব্যাংকের সঙ্গে নানান রকম সংকট, আন্তর্জাতিক মার্কেটে অর্ডার কম, রপ্তানি কম এমন নানান সংকট রয়েছে। এদিকে আমাদের সবকিছুরই মূল্য বেড়েছে। গ্যাসের মূল্য বেড়েছে, গ্যাস ঠিকমতো পাওয়া যায় না। এ কারণে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। উৎপাদন ব্যাহত মানে নির্ধারিত সময়ে টাকা না পেলে বেতন-বোনাস দিতে সমস্যা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ইনসেনটিভের প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। এই টাকা যদি ঈদের আগে পায় তবে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস দেওয়া সহজ হবে।
তবে আগের চেয়ে এবার সংকট বেশি বলে উল্লেখ করেন বিজেএমইএ’র সহ-সভাপতি আব্দুল্লাহ হীল রাকিব। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ২০২৪ সাল আমাদের জন্য আরও কঠিন একটা বছর। অনেকেই হয়তো এটি দেখতে পাচ্ছেন না, বর্তমানে ভালো কারখানার মালিকও ভোগান্তিতে পড়ছেন। কারখানার মালিক কোনোভাবেই বেতন-বোনাস বাকি রাখতে চান না।