বাংলাদেশ ভাষা আন্দোলনের চেতনায় এগিয়ে চলছে : প্রধানমন্ত্রী
ঢাকা, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ (বাসস) : প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ বায়ান্নো’র ভাষা আন্দোলনের চেতনায় এগিয়ে যাচ্ছে। মহান একুশ (২১ ফেব্রুয়ারি) যে আদর্শের শিক্ষা দিয়েছিল, সেই আদর্শে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে বলেই দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “একটা আদর্শ নিয়ে না চললে কোন দেশের উন্নতি করা যায় না। আর এই আদর্শ আমাদের শিখিয়েছে একুশ, ২১শে ফেব্রুয়ারি। ২১শে ফেব্রুয়ারির ত্যাগের মধ্য দিয়ে এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের আত্মত্যাগের ভিত্তিতে, সেই আদর্শ নিয়ে বাংলাদেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে বলেই দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে।” প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বিকেলে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে অমর একুশে এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির ভাষণে একথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, একুশ আমাদের শিখিয়েছে মাথা নত না করা। একুশ আমাদের শিখিয়েছে মাথা উঁচু করে চলা এবং আদর্শ নিয়ে চলা। ভাষা আন্দোলন থেকে যে চেতনার উন্মেষ ঘটেছে, তার মাধ্যমেই কিন্তু আজকে আমরা পেয়েছি আমাদের স্বাধীনতা। এই স্বাধীনতাকে আমাদের অর্থবহ করতে হবে। এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। আর ইতিহাস বিকৃতি করে আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাস যারা মুছে ফেলতে চেয়েছিল, ধীরে ধীরে তারাই আস্তাকুড়ে যাবে। আর বাঙ্গালী মাথা উঁচু করে স্বাধীন সত্বা নিয়ে বিশের¦ দরবারে মাথা উঁচু করে চলবে। এটাই হলো বাস্তবতা। তিনি বলেন, ভোগে নয় ত্যাগেই সব থেকে আনন্দ এবং অর্জন, এ কথাটা মনে রাখতে হবে। আর সেটা শিখিয়েছেন, আমাদের লাখো শহীদ। সেটা শিখিয়েছেন আমাদের ভাষা আন্দোলনের শহীদ। সেটা শিখিয়ে দিয়ে গেছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। কাজেই তার আদর্শ নিয়েই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশকে আর কেউ পেছনে টানতে পারবে না। এই সিদ্ধান্তটা নিয়েই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।
দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম ও ড. আব্দুর রাজ্জাক, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক উপ-কমিটির চেয়ারম্যান আতাউর রহমান, ঢাকা দক্ষিণ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফী, ঢাকা উত্তর মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বেনজীর আহমেদ এবং বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মোহাম্মদ নুরুল হুদা সভায় বক্তৃতা করেন।
আলোচনা সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড.আবদুস সোবহান গোলাপ ও সহ প্রচার সম্পাদক সৈয়দ আবদুল আউয়াল শামীম। শুরুতেই ভাষা আন্দোলনের শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ মানুষের জন্য কাজ করে বলেই মানুষের আস্থা ও ভালোবাসা এবং বিশ্বাস অর্জন করেছে। যার ফলে জনগণ বারবার ভোট দিয়ে আমাদের নির্বাচিত করেছে। শেখ হাসিনা বলেন, ’৭৫ এর পর থেকে বাংলাদেশে যে কয়টা নির্বাচন হয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়েছে ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির নির্বাচন। হাজার চেষ্টা করে, অপবাদ ছড়িয়ে, দেশে বিদেশে নানা তদবির করেও জনগণকে ঠেকাতে পারেনি, জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছে। সব থেকে বড় কথা- মহিলা ভোটার এবং নবীন ভোটাররা সব থেকে বেশি মাত্রায় এবার ভোট দিয়েছে। এখন আবার শুনি তাদের বড় বড় কথা, আন্দোলন করে সরকার হটিয়ে দেবে। তিনি এ সময় বাম রাজনীতির কিছু দলের সমালোচনা করে বলেন, সরকার হটানোর আন্দোলনে কিছু বামপন্থী দলও রয়েছে- তারাও এখন লাফায়। তারাও আন্দোলন করবে, বিপ্লব করবে।
প্রধানমন্ত্রী তাঁকে বারবার হত্যা প্রচেষ্টার উল্লেখ করে বলেন, জনগণ ও তাঁর দলের নেতাকর্মীরাই তাঁকে মানব ঢাল রচনা করে বারবার বাঁচিয়ে দিয়েছে। তিনি বলেন, আমি যাতে ক্ষমতায় আসতে না পারি, সেজন্য অনেক রকম চক্রান্ত হয়েছে। তারপরও আসতে আসতে (ক্ষমতায়) এই পঞ্চম দফায় এসে গেছি এবং বাংলাদেশটা এই ১৫ বছরে অন্তত বদলে গেছে। আমাদের বাংলাদেশের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নতি হয়েছে। গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত মানুষের উন্নতি হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার থেকে আমাদের স্বাধীনতা, গণতান্ত্রিত অধিকার অর্জন সব অর্জনই এসেছে অনেক আত্মত্যাগের মধ্যদিয়ে। তিনি বলেন, বাঙালির যা কিছু প্রাপ্তি সেটা আওয়ামী লীগই দিয়েছে। ‘ইতিহাসকে বিকৃতি করা এবং বঙ্গবন্ধুর অবদানকে অস্বীকার করা এটা বাংলাদেশের এক শ্রেনীর মানুষের মজ্জাগত,’ এমন অভিমত ব্যক্ত করে তিনি বলেন, এখনও দেখবেন যা কিছুই করেন, সেটা তাদের ভালো লাগেনা, কোনটাই নাকি ভালো হয়না। এই ভালো না লাগা গ্রুপই কিন্তু বাংলাদেশের বদনাম ছড়ায় সব জায়গায়।